1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৮ অপরাহ্ন

কমিশন করে জিয়ার ‘মরণোত্তর বিচার’ দাবি জানালো ভুক্তভোগী পরিবার

  • আপডেট টাইম :: রবিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২১, ৭.৪১ পিএম
  • ১৬২ বার পড়া হয়েছে

হাওর ডেস্ক::
বিদ্রোহ দমনের নামে ১৯৭৭ সালে সেনা ও বিমানবাহিনীতে কর্মরত মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁসি, কারাদণ্ড, গুম ও চাকরিচ্যুতির ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা।

ওই কমিশনের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উন্মোচন করে জেনারেল জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন তারা।

রোববার দুপুরে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভা থেকে এই দাবি জানানো হয়।

হারানো প্রিয়জনের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে এ সভায় যোগ দেন নিহতদের স্বজনরা। নিজেদের দুঃখ-কষ্টের কথা তারা বক্তৃতায় তুলে ধরেন। পরে শহীদ মিনার থেকে ক্যান্টমেন্ট অভিমুখে পদযাত্রায় অংশ নেন তারা।

কর্নেল নাজমুল হুদার মেয়ে নাহিদ এজাহার খান বলেন, “আমরা সেই সকল সন্তান, যাদের কাছে বাবা বলতে রক্তাক্ত স্মৃতি। আমরা সেই সকল সন্তান, যাদের বেঁচে থাকার জন্য সমাজে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়েছে। স্কুলে গেলে বলা হত, আমরা নাকি বিদেশি দালালের সন্তান।

“আমরা আসলে বড় হয়েছি অন্ধকার যুগে। মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে তখন ৭ নভেম্বর পালন করা হত ছুটির দিন। আমরা সেই হতভাগা, যারা বাবা হত্যার বিচারের জন্য আজও লড়ছি, অনেকে বাবার কবরটাও খুঁজে পাইনি।”

নাহিদ এজাহার বলেন, “আমি জেনারেল জিয়ার অবৈধ শাসনামলের সকল হত্যাকাণ্ড তদন্তে একটি কমিশন গঠনের দাবি করছি, যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে জিয়ার ষড়যন্ত্রের রাজনীতির মুখোশ উন্মোচন হয়।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান স্বপরিবারের নিহত হওয়ার পর সেনা প্রধানের দায়িত্ব আসেন জিয়াউর রহমান। এরপর মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনা বাহিনীতে একটি অভ্যুত্থানে গৃহবন্দি হন জিয়া।

৭ নভেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে যুক্ত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানে আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়া। এর মধ্য দিয়ে তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন, পরে দেশের প্রথম সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন। পরের বছর তিনি রাষ্ট্রপতির পদও নেন।

জিয়া ক্ষমতা দখলের পর সামরিক বাহিনীতে অনেকগুলো বিদ্রোহ-অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়, যাতে জড়িতদের সামরিক আদালতে বিচার করে মৃত্যুদণ্ডসহ নানা সাজা দেওয়া হয়।

১৯৭৬ সালে এই রকম এক বিচারের পর কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ওই বিচারকে ‘অবৈধ’ বলে পরে রায় দেয় উচ্চ আদালত।

বিএনপি ৭ নভেম্বরকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’, আওয়ামী লীগ ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ এবং জাসদ ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করে।

শহীদ মিনারের অনুষ্ঠানে জিয়ার মরণোত্তর বিচারের দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম বলেন, “এই জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনি, জেলহত্যার খুনি। এয়ার ফোর্সের ক্যুসহ ১৯টি ক্যুর নায়ক হল জিয়াউর রহমান। তার মরণোত্তরের বিচারের দাবি দীর্ঘদিনের।… কবর থেকে ওর হাড্ডি তুলে এনে হলেও বিচার করতে হবে। শুধু জিয়া নয়, এর সঙ্গে যারাই জড়িত ছিল, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাদের বিচার হবেই।

“একটা নিরপেক্ষ কমিশন হলে সব বেরিয়ে আসবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যেহেতু করতে পারছে, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে, এটাও হবে।”

অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, “পৃথিবীতে দুইশ বছরের আগের অন্যায়েরও বিচার হয়েছে। কলম্বাস আমেরিকাতে গিয়ে আদিবাসীদের যে হত্যা করেছে, সেটা যখন প্রকাশ হয়েছে কলম্বাসের মূর্তি সরিয়ে সেখানে এক আদিবাসী নারীর মূর্তি বসানো হয়েছিল। কাজেই বিচার হয়, বিচার হবে।”

স্বাধীন দেশে জিয়াউর রহমানের আমলে ‘গুম-খুনের’ কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “গুম করার মত নিষ্ঠুরতা আর কিছু হতে পারে না। কারণ কেউ জানতেও পারে না যে, এই মানুষটা কোথায় আছে, কখন ফিরে আসবে সেই আশায় থাকে স্বজনরা।

“এখনও যদি কোনো গুম হয়, আমি তার বিচার চাই। বাংলাদেশকে কেউ যাতে বলতে না পারে এখানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। অনেক কষ্ট করে এই স্বাধীনতা এসেছে। এদেশের মানুষ যত মূল্য দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছে, পৃথিবীর কোনো দেশ এত মূল্য দিয়ে স্বাধীনতা কেনে নাই। এই স্বাধীনতার অবমাননা করা যাবে না।”

সাবেক সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুন-অর-রশিদ বলেন, “পঁচাত্তরের পর যে সরকার এসেছিল, সেটা ছিল অবৈধ সরকার। তখন দেশে কোনো সংবিধান বা আইন ছিল না। জিয়া যা হুকুম করেছে, তাই ছিল আইন। আসামিকে ফাঁসি দেওয়ার পর ফাঁসির রায় দিয়েছে। হত্যার পর লাশ কী হবে, সেটাও বলে দিয়েছে। কত মানুষ হত্যা করেছে, তার হিসাব নাই । সেই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত সংখ্যা ও রহস্য উদঘাটন করতে হবে।”

অন্যদের মধ্যে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক, মাহাবুব উদ্দীন আহমদ বীরবিক্রম, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস এবং ১৯৭৭ সালে নিহত বেশ কয়েকজন সেনা ও বিমানবাহিনী সদস্যদের সন্তান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!