1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০১:১৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
গাজীপুরে মালবাহী ট্রেনের সাথে যাত্রীবাহী ট্রেনের ধাক্কা ছড়ারপাড়ে ছু রি কা ঘা তে প্রাণ গেল এক কিশোরের সিলেট ও সুনামগঞ্জের ৪টি উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমা দিলেন ৬৪ জন প্রার্থী বিদ্যুৎ সংকটে অতিষ্ঠ মফস্বল ও গ্রামীণ জনজীবন, বিতরণে বৈষম্য যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা গার্মেন্টস বন্ধের প্রতিবাদে বনানীতে সড়ক অবরোধ করেছে শ্রমিকরা ,যানজট শনিবার থেকে বন্ধ থাকবে যেসব জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সকালেই মুন্সীগঞ্জের সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরল একই পরিবারের ৩ জনের প্রাণ ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস,পাশাপাশি হতে পারে শিলাবৃষ্টিও সামর্থ্যের চেয়েও বেশি দিচ্ছেন তাসকিনরা, খুশি অধিনায়ক টালিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা দেবের হেলিকপ্টারে আগুন, কেমন আছেন দেব?

সাংবাদিক সুহৃদ জননেতা আব্দুজ জহুর ॥ লতিফুর রহমান রাজু

  • আপডেট টাইম :: শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৯, ২.২৭ এএম
  • ৩০৯ বার পড়া হয়েছে

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে গণমাধ্যমকর্মীরা বেশ আরাম আয়েসের সঙ্গে সংবাদসংগ্রহ, সংবাদপ্রেরণসহ যাবতীয় কাজ করছেন। আর এ কৃতিত্বের দাবিদার বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার নিঃসন্দেহেই। অথচ কয়েক বছর আগেও এ রকম সুযোগ-সুবিধা পাওয়া সহজ ছিল না। তারও আগের অবস্থা তো আরও করুণ ছিল। আমি তখন খুব সম্ভবত ১৯৯১ সালে বঙ্গবন্ধুর হাতেগড়া তাঁর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সম্পাদিত দৈনিক বাংলার বাণীর সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি। তখন সকালে বের হয়েই পোস্ট অফিসে গিয়ে নিউজের খাম পত্রিকার ঠিকানায় ছাড়তাম, তারপর বিকাল বেলা কুরিয়ার সাভির্সের মাধ্যমে আবার কারেন্ট কোন নিউজ হলে ল্যান্ডফোনে পাঠাতাম। প্রথম দু’টো মাধ্যমে গাঁটের টাকা খরচ করে পাঠাতাম। ল্যান্ডফোন তো তখন সবার ছিল না, আমারও ছিল না। তাছাড়া প্রতি মিনিটে বেশি টাকা গুণতে হতো। সব সময় পকেটে টাকাও থাকতো না। কিন্তু সাংবাদিকতার নেশা এমনভাবে বাসা বেঁধেছে যে করেই হোক নিউজ পাঠানো চাই। এছাড়া পত্রিকার প্রতিনিধি হওয়ার প্রতিযোগিতা ও ছিল তীব্র। কী আর করা। আমরা ভিন্ন পন্থা খুঁজতে লাগলাম। তখনকার দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী রনেন্দ্র তালুকদার পিংকু, দৈনিক রূপালীর প্রতিনিধি বর্তমানে (অবসর) চন্দন দাস (ডিয়ার চন্দন), দৈনিক যুবভেরীর প্রতিনিধি প্রয়াত আবুল কালাম, প্রয়াত শাহ জাহান কবির আফিন্দীসহ আরও অনেকে পুরাতন হাসপাতাল, আনসার অফিস টেলিফোন অফিসসহ অন্যান্য অফিসে বসে সবাই প্রায় সময় কারেন্ট নিউজ পাঠাতাম। তখন বুদ্ধি করে ওই অফিসগুলোর বড়কর্তাদের সাঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক গড়ে তুলি, শুধুমাত্র টেলিফোনে সুবিধা পাওয়ার জন্য। অমুক জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৪জন নিহত, তমুক গ্রামে ডাকাতি-খুনসহ কোন দুর্ঘটনা ঘটলেই আমরা দল বেঁধে উল্লেখিত অফিস সমূহে চলে যেতাম। উনারাও আমাদের আগমন দেখেই টেলিফোন সেট এগিয়ে দিয়ে বলতেন নিউজ পাঠান। তখন নিউজটি সংগ্রহ করে যে কেউ স্ক্রিপ্ট রেডি করে সবাই একই স্ক্রিপ্ট পড়ে ফোনে নিউজ বলে যেতাম অপর প্রান্তে স্টাফ রিপোর্টার লিখতেন। ওই নিউজ পাঠাতে যে কতবার লাইন কাটা যেত, আবার লাগাতাম, অনেক কষ্ট করে। কারণ সহজে এসটিডি লাইন পাওয়া যেত না। ফোনে আবার কথা ঠিকমত বুঝা যেত না। সরকারি অফিস ছাড়াও মাননীয় কয়েকজন সংসদ সদস্যের ফোনও অনেকবার ব্যবহার করেছি আমরা তখনকার সাংবাদিকরা। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তৎকালীন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রয়াত গোলাম জিলানী চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত আব্দুজ জহুর। আমি আমার এই লেখার মাধ্যমে গণমাধ্যমকর্মীদের পক্ষ থেকে সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। কারণ ওই সময়ে আমরা কি যে উপকৃত হয়েছি তা শুধু আমরাই জানি। উনাদের কাছ থেকে শুধু টেলিফোন সুবিধা নয়, সঙ্গে চা-নাস্তা খাওয়ার মওকাও উপরি পাওনা হিসেবে ভাগ্যে জুটত। ।
আমার মনে হয়, সবচেয়ে বেশি জহুর চাচাকে জ্বালিয়েছি আমরা। কারণ উনি যখন সংসদ সদস্য ছিলেন তখন প্রায় প্রতিদিনই বাসায় গিয়ে ৪/৫ জন নিউজ পাঠাতাম এবং সাথে চা-নাস্তা খেয়ে আসতাম। চাচা আমাদের খুব আদর করতেন। আমরা যাওয়ার পরেই উনার ছেলে জুনেদকে বলতেন, আমাদের চা দেওয়ার জন্য। জুনেদ বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ওই সময় চাচার পাশে বসে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে গল্প শুনতাম।
উনি সাত্যিকারের রাজনীতিবিদ ছিলেন। ছিলেন সৎ ও জনদরদি এবং সাদামাটা জীবন-যাপন করতেন। উনি এমপি থাকাকালে উনার বাসায় বা চলাফেরায় কোনও চাকচিক্য দেখিনি। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ ছিলেন তিনি। মানুষও তাঁকে মন থেকে শ্রদ্ধা করতো, ভালোবাসতো। আওয়ামী লীগ সরকার তাঁকে সম্মান দেখিয়ে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর উপর নির্মিত সেতুর নাম তাঁর নামে দিয়ে মানুষের মাঝে তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আর তাঁর কথা মনে হলেই মনে ভাবনা হয় যে, এখন একবার এমপি হওয়ার সুবাদে আলাদীনের চেরাগ হাতে পাওয়া, গাড়ি-বাড়ি-প্রভাব প্রতিপত্তি কোনও কিছুরই কমতি থাকে না। ভাবি এখন তাঁর মতো সত্যিকার অর্থে মহৎ রাজনীতিবিদের বড়ই অভাব। আগের রাজনীতিবিদ আর এখনকার রাজনীতিবিদদের মধ্যে কতো তফাৎ, আকাশ আর পাতাল ।
তাঁর বাসায় যাওয়া-আসা ও সং¯্রবের অনেক স্মৃতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি স্মৃতি আছে। একদিন আমরা সন্ধ্যার পর তাঁর বাসায় গিয়ে দেখি উনি লেপ গায়ে দিয়ে খাটে বসে আছেন। জীবনের শেষ সময়ে প্রায়ই অসুখ-বিসুখ লেগে থাকতো। আমরা ঘরে ঢুকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘চাচার শরীর খারাপ না কিতা’ সাথে সাথে প্রচ- জোরে ও রাগ করে বলে উঠলেন, ‘কেলায় কইছে ?’ থতোমতো খেয়ে নীরব হয়ে রইলাম। সারা ঘর যেন কেঁপে উঠছে। তখন প্রচ- রাগ করে বলতে লাগলেন, ‘সবাই শুধু বলে আমি অসুস্থ। কই অসুস্থ। আমি তো ঠিকই আছি। এরকম অসুখ তো সবারই আছে। আমাকে নমিনেশন থেকে বঞ্চিত করার জন্য সবাই উঠেপড়ে লাগছে।’ পরে অবশ্য আমাদেরকে আদর করে বললেন, ‘তোমরা কিছু মনে করোনা । আমাকে যাতে আগামী সংসদ নির্বাচনে দল মনোনয়ন না দেয়, তার জন্য একটি মহল আমাকে অসুস্থ বানানোর অপচেষ্টা করছে। এই কথা শুনতে শুনতে আমি মহা বিরক্ত হয়ে আছি। তাই তোমাদের কথা শুনে আমি রাগ করলাম। মনে কিছু করো না।’ তখন আমরা স্বাভাবিক হলাম। বললাম, ‘চাচা আমরা তো আপনার শুভাকাঙ্খী। তাই স্বাভাবিকভাবে কথাগুলো জিজ্ঞেস করেছি। অন্য কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে বলিনি।’ তাঁর সংস্পর্শে অনেক দিন ছিলাম কিন্তু কোনওদিন রাগ করতে দেখেনি। এই প্রথম প্রচ- রাগ দেখলাম। রাজনীতির প্রতি কতটা বিশ্বাসী ও জনগণের সেবার জন্য কতটা দরদী থাকলে এমনটা করতে পারেন সেদিন আমরা বুঝেছিলাম। তিনি চেয়েছিলেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সরবেই রাজনীতির মঞ্চে থেকে দেশ ও জনগণের সেবা করে যাবেন।
তখনকার সময় সুনামগঞ্জে রাজনৈতিক-সামাজিক কর্মকা– সবই জহুর সাবসহ তাঁদের সময়কার নেতৃবৃন্দের মাধ্যমেই সংঘটিত হতো। নির্লোভ, নিরহংকারী ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়ার কারণে বেশ কয়েকবার এম.পি. হয়েও নিজের আর্থিক অবস্থার তেমন পরিবর্তন করতে পারেননি, তেমন স্বচ্ছলতা তাঁর সংসারে আসেনি কখনও। তিনি ১৯৭০ সালে এম.পি.এ. এবং ১৯৭৩ সালে এম.পি. এবং ১৯৯১ সালেও সর্বশেষে এম.পি. নির্বাচিত হন। জহুর সাহেবের সাধারণ মানুষের প্রতি অকৃত্রিম মমত্ববোধ ও তাঁর সরলমনা স্বভাবের কারণেই মানুষ তাঁকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করতো ও ভালোবাসতো। এখনও তাঁর কথা সময়ে-অসময়ে মানুষ স্মরণ করে।
২০০৭ সালের ২২ মে রাত প্রায় ১২টার দিকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ওই রাতে আমি ঘুমে ছিলাম। রাত প্রায় দেড়টার সময় দৈনিক শ্যামল সিলেট পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক চৌধুরী মুমতাজ আহমদ, সবার প্রিয় মম ভাইর, ফোনে আমার ঘুম ভাঙ্গে। ফোন ধরার পর মমভাই কয়েক মিনিট আমার সাথে ভালো-মন্দ কথা বলেন। কিছু সময় পর বলেন, ‘রাজু সাহেব ! জহুর সাব যে মারা গেছেন, জানেননি।’ আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘জি না।’ উনি বললেন, ‘কিছু সময় আগে সিলেটে মারা গেছেন।’ মমভাই বললেন, ‘আপনি উনার সম্পর্কে যতটুকু পারা যায় খবর নিয়ে আমাকে জানান। আমরা পরদিন লিড নিউজ করবো।’ আমি উনার বাসার ল্যান্ডফোনে কল দিয়ে উনার বাসার লোকদের সাথে কথা বলে উপস্থিত মূহুর্তে যতটুকু সম্ভব তথ্য ফোনেই মমভাইকে জানাই। পরদিন আমার তথ্যের উপর নির্ভর করে মমভাইয়ের সাংবাদিক ক্যারিসমাযুক্ত হয়ে একটি প্রতিবেদন শ্যামল সিলেটে লিড নিউজ রূপে প্রকাশিত হয়। সেদিন আর কোনও পত্রিকা এ সম্পর্কে কোনও খবর ছাপাতে পারেনি।
##
(লেখক: লতিফুর রহমান রাজু, সাধারণ সম্পাদক সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাব ও সভাপতি সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটি)

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!