হাওর ডেস্ক ::
বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিভিন্ন সময় সৌদি আরব যাওয়া ৫৪ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে এখন চাপ দিচ্ছে দেশটির সরকার। সৌদি আরব মনে করে, বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে এসব রোহিঙ্গা আকাশপথে সে দেশে গেছে। এখন এদের কারও পাসপোর্ট বা অন্য কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। তাই এদের নতুন করে পাসপোর্ট দিয়ে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট না দিলে সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ বলেছে, কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়া হবে না। শুধু যারা আগে পাসপোর্ট পেয়েছে এবং তাদের কাছে যদি এর কোনো কাগজ থাকে, তবে আমরা নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করব।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিগত কয়েক বছরে এসব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় তোলে সৌদি। গত দুই বছরে বাংলাদেশকে একাধিক চিঠি দিয়ে বিষয়টির সমাধান চেয়েছে দেশটি। সর্বশেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের যৌথ কমিশনের বৈঠকে সৌদি আরব প্রসঙ্গটি আনুষ্ঠানিকভাবে তোলে। এই রোহিঙ্গারা ৩০-৪০ বছর ধরে সে দেশে অবস্থান করছে এবং সৌদি আরব
নিজেই এর মধ্যে অনেককে নিয়ে গিয়েছিল। ফলে সৌদি আরবের চিঠির জবাবে বাংলাদেশ বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে জানাতে তাদের অনুরোধ করেছে। একই সঙ্গে শুধু জাতীয়তা নিশ্চিত হলেই এদের ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, ’৮০ ও ’৯০-এর দশকে সৌদি আরবের তৎকালীন বাদশা স্বপ্রণোদিত হয়ে অনেক রোহিঙ্গাকে সে দেশে নিয়ে গেছেন। অনেকে সরাসরি গেছেন। কেউ কেউ হয়তো বাংলাদেশ হয়েও গেছেন; কিন্তু এটি আমরা পুরোপুরি জানি না। এখন তারা বলছেন- ৫৪ হাজার রোহিঙ্গা সেখানে আছে। এদের কোনো পাসপোর্ট এবং কাগজপত্র নেই। তারা আরও বলছেন- এদের তোমরা পাসপোর্ট ইস্যু করো। আমরা বলেছি, যারা আগে পাসপোর্ট পেয়েছে এবং তাদের পাসপোর্টের কাগজ যদি থাকে, তবে আমরা নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করব; কিন্তু এরা যদি আমাদের লোক না হয়, তবে আমরা নেব না।’
বাংলাদেশের নাগরিক না হওয়ার পরও কীভাবে সৌদি আরব পাসপোর্ট ইস্যু করতে বলে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘সেটা আমি কী করব, এটা মুশকিল। রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট না দিলে অন্য বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। জুনিয়র লেভেলে কেউ কেউ বলছে- তোমরা যদি এদের না নাও বা পাসপোর্ট ইস্যু না করো, তবে তোমাদের দেশ থেকে এত লোক আনছি, এটা আমরা বন্ধ করে দেব। তোমাদের যে ২২ লাখ লোক আছে, তাদের সম্পর্কে নেতিবাচক অবস্থান নেব। এই কথাগুলো জুনিয়র লেভেল থেকে আমাদের বলা হয়েছে; কিন্তু আমার মনে হয় এটি টিকবে না।’
পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি বিষয়টি দেখছে জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, ‘সৌদি আরবের কিছুটা তাগাদা আছে। তারা বলছে, নাগরিকত্বহীন কোনো ব্যক্তিকে তারা রাখবে না। তোমরা তাড়াতাড়ি এর ব্যবস্থা করো। আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’