1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:১০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত জানিয়েছেন মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট! বান্দরবানের বাকলাইতে পাওয়া গেল দুই ‘কেএনএফ’ সদস্যের মরদেহ সড়ক দুর্ঘটনায় সিলেটে নিহত ৩ ভারতের দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে ৮৮ আসনে ভোটগ্রহণ শুরু প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে :প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার দেশের যে যে বিভাগ গুলোতে টানা ৩ দিন ঝড়বৃষ্টি হতে পাড়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঘুড়তে গিয়ে এক পর্যটকের মৃত্যু রোববার থেকে খোলা হতে পাড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে যা জানাল মন্ত্রণালয় সিলেটের মাঠে ভারতকে হারাতে প্রস্তুত বাঘিনীরা মে মাসের প্রথম সপ্তাহে অতি বৃষ্টিপাতে সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যার শঙ্কা

সুনামগঞ্জে বন্যাশ্রয় কেন্দ্রে বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ

  • আপডেট টাইম :: বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০, ৮.৫৪ এএম
  • ৩০১ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের অস্থায়ী বন্যাশ্রয় কেন্দ্রে গাদাগাদি করে বাস করছেন বানভাসী মানুষেরা। সামাজিক দূরত্বতো দূরের কথা একটি কক্ষে অন্তত ১০টি করে পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বারান্দায়ও অবস্থান করছেন অনেকে। আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের বেশিরভাগই হতদরিদ্র। যার ফলে তারা খাদ্য সংকটেও আছেন। এসব পরিবারের নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন স্বজনরা। মঙ্গলবার সুনামগঞ্জ পৌর শহরের চারটি আশ্রয় কেন্দ্র সরেজমিন পরিদর্শন করে এই অবস্থা লক্ষ্য করা গেছে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকজন সংসদ সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরকে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা খাবার ও শুকনো খাবার বিতরণ করতে দেখা গেছে।
জেলা প্রশাসনের হিসেবে সুনামগঞ্জে ৩৫৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ হাজার ১৯৩টি পরিবার মিলিয়ে ১২ হাজার ৭৭২জন বানভাসী মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ পৌর শহরেই ২৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৩ হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই হতদরিদ্র। পৌরসভার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন বন্যায় পৌর শহরের প্রায় ৩ হাজার বাসাবাড়ি নিমজ্জিত হয়ে অন্তত ১৫ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বানভাসী এসব মানুষ শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে স্কুলে আশ্রয় নেওয়ার পরও স্কুলও নিমজ্জিত হওয়ায় অন্যত্র ছুটে গেছেন। প্রশাসনের মতে ৮১ টি ইউনিয়নের লাখো পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় লবজান চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ের তিনটি কক্ষে পানি। দোতলায় এবং পানি প্রবেশ করেনি নিচতলার কয়েকটি কক্ষে ৪৬টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। কয়েকজন সঙ্গে গরুও নিয়ে এসেছেন। রেখেছেন স্কুলের শামসুল আবেদিন বিজ্ঞান কক্ষের বারান্দায়। বানের পানিতে স্কুলের বারান্দায় থেকে বাসন কোসন ও কাপড় ধুচ্ছিলেন নারী ও শিশুরা। এখানে আসা সবাই শহরের তেঘরিয়া, পশ্চিম হাজিপাড়া, হাজিপাড়া, বড়পাড়ার বাসিন্দা। ঘরের বিছানাপত্র পানিতে ভিজে যাওয়ায় নিয়ে আসতে পারেননি। তাই স্কুলের বেঞ্চগুলোতেই কোনমতে দিন কাটাচ্ছেন তারা। তারা কেউ এখন পর্যন্ত সরকারি ত্রাণ সহায়তা পাননি। পাশেই বড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যাশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় স্কুলের বারান্দা সংলগ্ন খোলা জায়গায় হাটুপানি। সেই পানিতে বানভাসী মানুষের শিশুরা খেলাধুলা করছে। খোজ নিয়ে জানা গেল এই স্কুলে ২৬টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। দোতলা এবং নিচতলার দুটি কক্ষে তারা সাময়িক আশ্রয় নিয়েছেন। এই স্কুলে এসে স্থান পাননি রহিমা বেগম নামের এক স্বামী পরিত্যাক্তা নারী। তাই তিনি ৭ মাসের শিশু সন্তান, বৃদ্ধা মা ও ছোট ভাই-বোনকে নিয়ে স্কুলের বারান্দায়ই আশ্রয় নিয়েছেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত চুলা জ্বালাতে পারেননি তিনি। তাই শুকনো খাবার খেয়েই আছেন। তিনিও কোন সহযোগিতা পাননি। ওই সময় দেখা গেল পৌর মেয়র নাদের বখত রান্না করা খিচুরি নিয়ে আসছেন। খিুচুরির বড় পাত্র দেখে হুমড়ি খেয়ে পড়ে বন্যাশ্রয় কেন্দ্রের শিশুরা।

রহিমা বেগম বলেন, ‘দুইবার আমার ঘর পানিত ডুবছে। কয়েকটা মোরগ আছিল, কিছু খাবারের জিনিষপত্র আছিল সব নষ্ট অইগিছে। রইব্যার রাইতে হাতরাইয়া ইস্কুলে আইয়া দেখি জাগা নাই। পরে বারান্দাত আশ্রয় নিছি। এখন পর্যন্ত সরকারি কুনুস্থা পাইছিনা। আমার আনা খাইয়া আছি।
বড়পাড়া বন্যাশ্রয় কেন্দ্রের হতদরিদ্র নারী ফাতিহা বেগম বলেন, আমরার ঘরের বুকইমা পানি। বাইচ্চা কাইচ্চারে কান্দ লইয়া তেঘরিয়া ইস্কুলো আইছি। তিনদিন যাবত গুড় ছিরা খায়রাম। ইকানো রান্নার কোন সুযোগ নাই। বাথরুমে যাওয়ার সুযোগ নাই। বেশি মানুষ থাকায় বাথরুম ব্যবহার করা যায়না। আমরা খুব কষ্টে আছি।
তেঘরিয়া মাদরাসা আশ্রয় কেন্দ্রে দুপুর আড়াইটায় গিয়ে দেখা যায় ৮-১০টি পরিবার দোতলায় আশ্রয় নিয়েছেন। তাদেরকে ইট সংগ্রহ করে চুলায় আগুন জ্বালাতে দেখা গেছে। তারাও কোন সরকারি সহায়তা পাননি।
বিকেল ৩টায় শহরের হাছননগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় নিচতলার একটি কক্ষে ১০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। তারা বুড়িস্থল, সুলতানপুর, আফতাবনগর এলাকা থেকে এসেছেন। এসময় পক্ষাঘাতগ্রস্থ ৭৫ বছর বয়সী নারী তাহিরুন নেসাকে দেখা গেল বেঞ্চে বসে ঝিমুচ্ছেন। তিনি ছেলের কাছে থাকেন। যেখানে থাকেন সেই মাটির ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। তাই বৃদ্ধা মাকে নিয়ে স্কুলে এসে ছেলে গেছেন রিক্সা চালাতে। অভূক্ত ওই নারীকে আশ্রয় কেন্দ্রের এক নারী এক প্লেট খিচুরি দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেন। ওই আশ্রয় কেন্দ্রের দ্বিতলা ও তৃতীয় তলায় মিলিয়ে আরো ৪০টি পরিবার গাদাদারি করে থাকেন দুটি তিনটি কক্ষে।
এই আশ্রয় কেন্দ্রের হতদরিদ্র নারী জাহেরুন নেসা বলেন, আমরা খুব কষ্টে আছি। একটা ঘরো ৮-১০টা পরিবার। রাতে ঘুম নাই, খানি নাই। আজকে সারাদিন উপাস আছি। ই আশ্রয় কেন্দ্রের কেউ কুন্তা পাইছেনা।
এই আশ্রয় কেন্দ্রে তিন শিশু সন্তান নিয়ে আশ্রয় নেন বিধবা জেসমিন বেগম। তিনি মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করেন। ১৫শ টাকায় একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকেন। দুই দফা বন্যায় সেই বাসায় বুক সমান পানি। তাই সন্তান নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে আসলেও জিনিষপত্রগুলো ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আশ্রয় কেন্দ্রে একটি কক্ষে গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন তিনি।
জেসমিন বলেন, করোনার লাগি কেউ বাসা বাড়িত নেয়না। কামকাজ নাই। এর মাঝে বন্যা আইয়া বিপদে ফালাইছে। ইস্কুলে আইয়া মাথা গোজার ঠাই পাইলেও খাওন দাওন কুন্তা পাইনা। খুব কষ্টে বাইচ্চারারে লইয়া আইছি। বাচমু কিলা বুঝিনা ভাই।
শহরের ২৬ আশ্রয় কেন্দ্রে পৌরসভার খিচুরি বিতরণ
সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বখত সোমবার ও মঙ্গলবার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে বড় বড় পাত্রে খিচুরি রান্না করিয়ে পৌরসভার গাড়ি করে নিয়ে যান। এসময় আশ্রয় কেন্দ্রের ভানবাসী মানুষেরা খিচুরির জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন। খিচুরি বিতরণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় সংশ্লিষ্টদের। মঙ্গলবার তিনি ১০টি আশ্রয় কেন্দ্রে রান্না করা খিচুরি বিতরণ করেছেন। কয়েকটিতে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। পৌর মেয়র নাদের বখত বলেন, আমার পৌরসভার অন্তত ১৫ হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিন হাজার বাসাবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন তাদেরকে সাধ্যমতো আমরা খিচুরি ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। আশ্রয় কেন্দ্রসহ অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ যারা আছেন তাদের সহযোগিতার জন্য আমি প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছি।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, দুই দফা বন্যায় আমরা ৮৬৫ মে.টন চাল ও ৪৭ লক্ষ টাকা বিতরণ করেছি। বিভিন্ন উপজেলা থেকে এগুলো বিতরণ করা হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রসহ যারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত তাদের মধ্যে এসব সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে।
বন্যাপরিস্থিতি: সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাত বন্ধ থাকায় সুরমা নদীর পানি কমছে। তবে এখনো ৯ সে.মিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। তিনি বলেন, নদীতে পানি কমলেও হাওরাঞ্চলে এই পানি চাপ তৈরি করায় পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহরিয়ার, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে ত্রাণ বিতরণ করতে দেখা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!