1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৩ অপরাহ্ন

ছাতকে মাদরাসার ধর্ষক মওলানার পক্ষ নিয়ে ধর্ষিতার ভাইকে একঘরে

  • আপডেট টাইম :: শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৯, ৫.১৯ পিএম
  • ২১২ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি::
ছাতকে ধর্ষক মারাসা শিক্ষক মাওলানা আব্দুল হকের পক্ষ নিয়ে এবার ধর্ষিতা এতিম কন্যার বড় ভাইকে মসজিদে বিচার বসিয়ে ‘পাঁচের বাদ’ (একঘরে) করেছে গ্রামের মোড়লরা। শুক্রবার বাদ জুমআ মসজিদ প্রাঙ্গনে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ধর্ষক মাদরাসা শিক্ষক আব্দুল হকের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা তুলে না নেওয়ায় পঞ্চায়েত এই সিন্ধান্ত নিয়েছে বলে অসহায় পরিবারটি জানিয়েছে। সামাজিকভাবে বয়কট করার আগে ঈদুল আজহার দিনেও হতদরিদ্র এই পরিবারটিকে কোরবানির মাংসও দেয়নি মোড়লরা।
জানা গেছে ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের নয়া লম্বাহাটি গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের এক এতিম কিশোরী কন্যা ও ওই মাদরাসা শিক্ষকের ছাত্রীকে ধর্মীয়ভাবে মোহাচ্ছন্ন করে স্ত্রীর সহায়তায় ধর্ষন করে আসছিলো স্থানীয় হাসনাবাদ কওমি মাদরাসা শিক্ষক মো. আব্দুল হক (৫৬)। তিন বছর আগে স্থানীয় এক নিঃসন্তান প্রবাসী পুরুষের কাছে ওই এতিম কন্যাকে বিয়ে পরবর্তী শারিরিক সম্পর্ক রাখার শর্তে মধ্যস্ততা করে বিয়ে দেয় মাওলানা আব্দুল হক। বিয়ের পর ওই কিশোরী স্বামীর বাড়ি আসলে মাওলানা আব্দুল হক আবারও কিশোরীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়াতে প্রস্তাব দেয়। এতে বেকে বসে কিশোরি। এক পর্যায়ে তাকে হুমকি ধমকি দিয়ে আবারও জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ফলে বিষয়টি প্রকাশিত হয়, কিশোরির শশুর বাড়ির মানুষজনও তাদের বধুর উপর এই যৌন নির্যাতনের বিষয়টি জানতে পেরে হতভম্ব হন। কিশোরীর স্বামী ঘটনা জানতে পেরে ওই ভন্ড মাওলানার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আদেশ দেন নির্যাতিত স্ত্রীকে। এ ঘটনায় মামলা করতে চাইলে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে প্রভাবশালী মাওলানা আব্দুল হকের সমর্থক গ্রামের মোড়লরা দুই লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি তড়িগড়ি করে চাপা দিতে চায়। আব্দুল হক ও তার সমর্থক মোড়লরা এসময় গ্রামে ফতোয়া জারি করে এ বিষয়টি গোপন রাখার জন্য। এই দুষ্কর্মটি প্রকাশকারীকে পাপের ভার বহন করতে হবে এমমন ফতোয়াও দেয় তার।
২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিক কালের কণ্ঠে এই বর্বরতার খবরটি ‘ছাতকে তরুণীকে দীর্ঘনি ধরে শিক্ষকের ধর্ষণ’ প্রথম বারেরমতো প্রথম প্রকাশিত হয়। সংবাদের সূত্র সুনামঞ্জ মহিলা পরিষদ ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতা খুঁজে পায় এবং নির্যাতিত তরুণীকে আইনী সহায়তার আশ্বাস দেয়। কিন্তু মহিলা পরিষদ নেতবৃন্দ ফিরে আসার পর আব্দুল হকের সমর্থক মোড়লরা কিশোরীর পরিবার ও তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। অবশেষে ৩০ অক্টোবর ধর্ষক মাওলানা আব্দুল হক ও তার স্ত্রী সাকেরা বেগম (৪৬) এর বিরুদ্ধে ছাতক থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন নির্যাতিত কিশোরি। মামলা দায়েরের পরই মোড়লরা তার পরিবারকে পাঁচেরবাদ (একঘরে) করার হুমকি দিয়ে আসছিল। গত ৪ মার্চ আদালতে চুপিসারে জামিন নিতে আসলে আদালত ধর্ষক মাওলানা আব্দুল হককে জেল হাজতে প্রেরণ করে। আব্দুল হক জেল হাজতে যাওয়ার পরও তার স্বজন ও মোড়লরা নির্যাতিত কিশোরীর বড় ভাই আসাদ মিয়াকে মামলা তুলে নিতে বোনকে চাপ দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়ে আসছিল। কিন্তু অসহায় বড় ভাই এ ঘটনায় তার কোন হাত নেই বলার পরও তাকে নানাভাবে সামাজিকভাবে লাঞ্চিত করে আসছিল আব্দুল হক সমর্থিত মোড়লরা। সর্বশেষ গত ১২ আগস্ট অনুষ্ঠিত ঈদুল আজহার কোরবানির মাংসও তাকে দেয়নি মোড়লরা। গত ১৬ আগস্ট জুমার নামাজের পরে এ নিয়ে গ্রামের মসজিদে বৈঠক করে মোড়লরা তাকে আনুষ্ঠানিক বয়কটের ঘোষণা দেয়। সরকারি সড়কে চলাফেরা করতেও তাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সুনামগঞ্জ মহিলা পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রাশিদা সুলতানা বলেন, শুক্রবারই নির্যাতিত কিশোরী ও তার ভাই আমাদেরকে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমরা তাদেরকে আইনের মাধ্যমে সহায়তার কথা জানিয়েছি।
সামাজিক বয়কটের শালিসকারী স্থানীয় ইউপি সদস্য আরশ আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আসাদ মিয়ার সঙ্গে পঞ্চায়েতের একটি বিষয় ছিল। সে সেটা না মানায় তাকে সমাজের কোন কাজে মিশতে বারণ করা হয়েছে। তবে মসজিদের ভিতরে থাকায় আর কি কি সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটি শুনতে পারেননি বলে জানান তিনি। শালিসের অন্যতম সিদ্ধান্ত দাতা আমিনুল হক বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা। কিছু জানার থাকলে এলাকায় গিয়ে জানার কথা জানান তিনি। অপর মোড়ল আব্দুল হান্নানকে ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ছাতক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তাপস শীল বলেন, আমি বিষয়টি কিছুক্ষণ আগে একজনের মুখ থেকে শুনেছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে তলব করে বিষয়টি জেনে এমন ন্যাক্কারজনক কাজের কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!