1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৪১ অপরাহ্ন

জামালগঞ্জের হিজল করচের বাগ হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটকদের

  • আপডেট টাইম :: রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ৪.০৪ পিএম
  • ৬৮১ বার পড়া হয়েছে

আকবর হোসেন::
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া,ঘর হইতে দু পা ফেলিয়া, একটি ঘাসের শিশির উপর একটি শিশির বিন্দুএ কবির বাণী গুলো সার্থক। কবির এই কথা গুলোর সাথে আমাদের চির মিল। আমরা দেখি নাই, আমাদের কাছেই এত সৌর্ন্দয্য। তার অপার হাতছানি আমাদের দৃষ্টি কাটছেনা। অথচ দুই পা ফেললেই সহজেই দৃষ্টিকে জুড়াতে পারি আমরা। হাওর উপজেলা জামালগঞ্জের এমনই অপরূপ কয়েকটি হিজল বাগান তার অপার সৌন্দর্যের ঢালা ধরে আাহ্বান জানাচ্ছে।
প্রকৃতির অপরুপ সাজ, চির চেনা সবুজ আর সবুজের সমারোহ দেখতে ঘুরে আসুন। দেখে আসুন হাওরের নয়নাভিরাম দৃশ্য হিজল করচের বাগগুলো। বাগগুলোতে ঘুরে অবলোকন করুন, শরীর আর মনকে প্রশান্ত করুন। আমাদের হাওরের হিজল করচের বাগ গুলো হাতছানি দিয়ে ডাকছে আপনাকে। আর বলছে আসুন আমাকে অবলোকন করুন। বাগগুলোতে সকাল থেকে দুপুর, দুপুর থেকে বিকেল, বিকেল থেকে সন্ধ্যা, গভীর রাত, ভোরের আলোয় এক এক সময় এক রুপ ধারন করে হিজল করচের বাগে। গাছ গুলোতে হাজারো পাখির কলকাকলীতে ভরে উঠে পুরো হাওর পাড়। আর মাছের পাশাপাশি কাকড়া, কাছিম সহ নানা প্রজাতির প্রানীর ঝনঝনাতিতে অভয়ারন্য হিসেবে পুরো বাগ হয়ে মুখরিত হয়ে উঠে। ছোট ছোট নৌকা নিয়ে বাগের ভিতরে ঘুরলে আপনি হারিয়ে যাবেন আপন ভুবনে,আপনার কাছে মনে হবে আমি কোথায় ঘুরছি,নিজের চোখে না দেখলে আর না ঘুরে গেলে আপনিও বুঝতে পারবেননা প্রকৃতির অপার এই সৌর্ন্দয্যকে।
পাকনার হাওর পাড়ে বর্ষাকালে হিজল আর করচের এই বাগে এক রুপ আর হেমন্তে আরেক রুপ ধারন করে বাগগুলি। বিশেষ করে বর্ষা আর শীতের সৌর্ন্দয সকলকেই মুগ্ধ করে তোলে। বর্ষা কালে চর্তুদিকে পানি আর পানি আর মাঝখানে কানাইখালী নদী।  দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রতিদিনই নৌকায় করে ঘুরতে যান মানুষজন। অনেকেই দুর-দুরান্ত থেকে সপরিবার নিয়ে ছুঠে আসেন এই বাগগুলিতে দেখতে। হেমন্ত কাল,আর শীতের সময়ও আসেন পর্যটকরা। হাজারো পাখির কলকাকলি শুনতে মানুষজন ছুঠে আসেন বাগের মধ্যে। দিনের বেলায় প্রচন্ড রোদ না থাকলে কিছুটা আধার আর নিরব ও নি:স্তব্দ মনে হয়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন অফিস,স্কুল,কলেজ সরকারী বন্ধের দিনগুলোতে পিকনিক করতে চলে যান বাগে। পাশেই বিরাট হাওর,মাঠ আগত অতিথিরা খেলা ধুলা আরামে কাঠিয়ে যান পুরো দিনটা।
একটি বাগ কানাইখালীর দুই তীরের একপাড়ে ছয়হারা গ্রামের সামনে থেকে ভাটী দৌলতপুর, আরেক তীরে কামারগাও থেকে বিনাজুড়া পর্যন্ত, আরেকটি বাগ খুজারগাও গ্রামের পাশে, মাতার গাও, গঙ্গাধরপুর গ্রামের পেছনে পশ্চিম দিকে আরো একটি বাগ। আমাদের অপরুপ বাগগুলো প্রচারহীন ভাবে পড়ে রয়েছে। যার কারনে অনেক ভ্রমন পিপাসু ও পর্যটকরা এই স্থানটির কথা জানতে পারছেননা।
আর এই সব গুলি বাগই সৃষ্টি করেছেন পরিবেশবাদী সংগঠন সেন্ট্রার ফর ন্যাচারল রির্সোস স্ট্রাডিজ (সিএনআরএস)। পরিবেশবাদী এই সংগঠনটি তিলে তিলে হাজারো গাছের মাধ্যমে গড়ে তুলে পশুপাখি আর মাছের অভয়ারন্য হিজল করচের বাগগুলিকে।
বাগ গুলো জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাক ইউনিয়নে অবস্থিত। বাগগুলো যেমন শান্ত, তার চেয়ে বেশী শান্ত বাগের পাড়ের গ্রাম গুলোর বাসিন্দারা। আশপাশের সকল গ্রামের লোকজনই সনাতন ধর্মের। বিশেষ করে এই পুরো এলাকাটিই সনাতন ধর্মের লোক বাস করে আমরা আঞ্চলিক ভাষায় এই এলাকাকে বলি নয়মৌজা। আর স্থানীয় ভাবে নৌমৌজা হিসেবেই পরিচিত। বাগের আশেপাশের মানুষজনও অতিথি পরায়ন। অতিথি পেলে আথিতেয়তা করে তারা খুশী হন।
বর্ষা কালে উপজেলা সদর থেকে লাল বাজার/কারেন্টের বাজার অটোরিক্সায় ভাড়া ১০ টাকা, সেখান থেকে বাগে রির্জাভ নৌকায় আসা যাওয়া ২শত টাকা খরচ হবে।
হেমন্ত কালে জামালগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ইচ্ছে করলেই কেউ সহজেই ঘুরে আসতে পারেন বাগগুলোতে। উপজেলা সদর থেকে সরাসরি প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, লেগুনা, সিএনজি ও মটরবাইকে যাওয়া যায় সময় লাগবে ২০-৩০ মিনিট। আর খরচ পড়বে ২শত থেকে ৩ শত টাকা।
হাওর পাড়ের বাসিন্দা কৃষক সুকুমার দাস বলেন, বর্ষা আর শীত কালের সৌন্দর্য সকলকে মুগ্ধ করে। অনেক দূর থেকে বন্ধের দিন মানুষজন দেখতে আসেন। এলাকার মানুষ হিসেবে আমরা যারা আসেন তাদের খোজ খবর ও সুবিধা অসুবিধা আমরা দেখি। স্থানীয় সাংবাদিক অঞ্জন পুরকায়স্থ জানান, মা যেমন তার ছোট বাচ্চাকে লালন পালন করে বড় করে ঠিক তেমনী আমাদের নৌও মৌজার মানুষজন বাগগুলোক দেখে দেখে বড় করেছে। পর্যটকদেরকে এলাকার মানুষ খুব সম্মান দেখায় এবং সহযোগিতা করে। সিএনআরএসের ফিল্ড ম্যানেজার ইয়াহিয়া সাজ্জাদ বলেন, ইউএনডিপির অর্থায়নে এফইএমপি পোগ্রামের আওতায় ১৯৯৯ সাল থেকে গাছ লাগানো শুরু হয়ে ২০০১ সালে শেষ হয়েছে। বাগগুলিতে তৎকালীন সময়ে হিজল ১ লক্ষ ৫০ হাজার আর করচ ২৫ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে।
দেশ টেলিভিশনের সিলেট ব্যুারো চিফ সাংবাদিক বাপ্পা ঘোষ চৌধুরী বলেন, আমি বাড়িতে ছুঠিতে গেলে বাগগুলিতে যাই। আমি আমার স্কুল জীবনের বন্ধুদের নিয়ে নৌকা দিয়ে ঘুরে বেড়াই। এইতো মাত্র কদিন আগেও ঘুরে এসেছি। সিলেটের রাতার গুল থেকে আমাদের বাগগুলিও কম নয়, শুধু মাত্র প্রচারনার কারনে এই পর্যটন স্পট গুলো পিছিয়ে আছে।
পরিবেশবাদী সংস্থা সিএনআরএসের পরিচালক মো: আনিসুল ইসলাম বলেন, হাওর পাড়ের গাছ গুলোকে মানুষ যখন লাকড়ী হিসেবে ব্যবহার করতো। জলাবন ও বাগগুলো ধ্বংসের পথে ছিলো। সরকারের যখন হাওরের বন গুলোতে কোন নিয়ন্ত্রন ছিলোনা, তখন আমরা উদ্যোগ নিয়ে মানুষের অনুভুতির পরিবর্তনের পর আমরা হাওরের পরিবেশ ও  জীবন জীবিকায়নের উদ্দ্যোশে নিয়ে কাজ শুরু করি। স্থানীয় ভাবে জেলা প্রশাসক ও ইউএনও মতামতে ধ্বংস প্রায় বন গুলোকে নতুন ভাবে গড়ি তুলেছি।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!