স্টাফ রিপোর্টার ::
আজ সাধক কবি ও জ্ঞানের সাগর খ্যাত দূর্ব্বীন শাহ’র অন্যতম শিষ্য বাউল কফিল উদ্দিন সরকারের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি সিলেটের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি প্রায় ৫ হাজার গান রচনা করেছিলেন। তাঁর অসংখ্য জনপ্রিয় গান কণ্ঠে তুলে খ্যাতি অর্জন করেছেন বহু শিল্পী। তিনি এক হাতে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ও গান গেয়ে মুগ্ধ করেছেন দর্শক-শ্রোতাকে। ঠোঁটের সাহায্যে তাঁর মন্দিরা বাজানোর দৃশ্যে হৃদয়ে দাগ কাটে। অল্প সময়ে যেকোনো বিষয়ে গান লিখে দেওয়ার অসামান্য ক্ষমতা ছিল তাঁর।
১৯৩২ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের মালঞ্চপুর গ্রামে বাউল কফিল উদ্দিনের জন্ম। তাঁর পিতা মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন, মা করিমুন্নেসা। এক বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। ২০ বছর বয়স থেকে তিনি দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের আকিলপুর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
কফিল উদ্দিন সরকার শিশুকাল থেকে রাত জেগে পালাগান শুনতে শুনতেই গানের জগতে প্রবেশ। যৌবনের সন্ধিক্ষণে গান লিখতে শুরু করেন। একতারা, দোতারা বাজিয়ে গাইতেন নিজের এবং বিভিন্ন মহাজনি গান। বহু দুঃখ-দুর্দশায় জীবন কাটালেও থেমে থাকেনি তাঁর কণ্ঠ। প্রখ্যাত মরমী সাধক দূর্ব্বীন শাহ’র সান্নিধ্যে এসে শিষ্যত্ব গ্রহণের পর কফিল উদ্দিন সরকার বাউলিয়ানা জীবন শুরু হয়। গুরুর সান্নিধ্যে থেকে গান গেয়ে ঘুরে বেড়ান গ্রামে-গঞ্জে, শহর-বন্দরে। এক সময়ে তিনি জনপ্রিয় মালজোড়া গানে বাউল সমাজে খ্যাতি অর্জন করেন। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম, আব্দুছ সাত্তার, আলী হোসেন সরকার, বাউল ইদ্রিস আলী, সফর আলী, অশীয় ঠাকুর প্রমুখ খ্যাতনামা বাউলদের সঙ্গে তিনি মালজোড়া গান করেন। তিনি বাংলা গানের জগতে অসংখ্য বাউলগান, পালাগান, সারি গান, মুর্শিদী, লোকগীতিসহ অসংখ্য পল্লী গান রচনা করেন। তাঁর রচিত প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত মিলে প্রায় ৫ সহস্রোধিক গান রয়েছে। তাঁর লেখা জনপ্রিয় গান গুলোর মধ্যে- “আমি চাইলাম যারে ভবে পাইলানাম তারে/সে এখন বাস করে অন্যের ঘরে’’ অন্যতম। তাঁর রচিত আরেকটি সাড়াজাগানো গান হলো- “আমার বন্ধুয়া বিহনে গো, সহেনা পরানে গো/একেলা ঘরে রইতে পারিনা।”
১৯৬৭ সালের ৭ নভেম্বর তাঁর রচিত ‘রত্নের ভাণ্ডার’ নামে প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড দুটি গীত সংকলন প্রকাশিত হয়।