1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৭:০৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

বিটিভির জলসাঘরে শাহ আবদুল করিম ।। ফজলুল কবির তুহিন

  • আপডেট টাইম :: বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২.০০ পিএম
  • ৪২৬ বার পড়া হয়েছে

হুমায়ূন স্যার ১৯৯৪ সালে হাসন লোক উৎসবে এসে রাতের আড্ডায় বাউল শাহ আবদুল করিমের গান আমার কণ্ঠে প্রথম বারের মতো শোনেন। গানের পাশাপাশি শ্রদ্ধাভাজন সাংবাদিক ও স্যারের ঘনিষ্টজন সালেহ চৌধুরীও তাকে বাউল করিমের বিষয়ে অবগত করেন। স্যারের মনের ভেতরে ঢুকে পড়ে করিমের একতারার সুর। বিটিভির ঈদ স্পেশাল ম্যাগাজিন ‘জলসা’ অনুষ্টানে তাকে দিয়ে গান গাওয়ানো ও গানের ফাঁকে তার স্বাক্ষাৎকারের কথা বলেন স্যার। আমার কাঁধে দায়িত্ব পড়ে বাউল করিমকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার। আমি বারবার করিম ভাইর সাথে যোগাযোগ করেও তাকে ধরতে পারি না। তখন সুনামগঞ্জ থেকে দিরাই হয়ে উজানধলে যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিলো। সারাদিন লেগে যেতো উজানধলে পৌঁছাতে। ক্ষ্যপা বাউল করিম সঙ্গী-সাথী নিয়ে গান গেয়ে বেড়ান এখানে সেখানে। সবসময় গিয়ে দেখা হয়না। দেখা হলেও বলেন, সামনের মাসে ঢাকা যাবো। কিন্তু আর ঢাকা যাওয়া হয়না। শেষমেষ বছরখানেক চেষ্টার পরে ১৯৯৭ সালে তাকে একপ্রকার ধরেই ঢাকায় নিয়ে যাই। তিনি সঙ্গে আরো কয়েকজন বাউল নেন। জলসাঘরে কেবল তাঁর গান ও কথাই প্রচারের পরিকল্পনা ছিল অনুষ্ঠানে। তার সঙ্গীদের গাওয়ার কথা ছিল না। ফলে সঙ্গী বাউলরা অনুষ্টানে গান গাইতে না পেরে বাউল করিমের কান ভারি করেন। তাছাড়া স্যারের এক এসিসস্ট্যান্টের কারণেও বাউল আবদুল করিম নিজে বিরক্ত হন এবং তিনি ক্ষুব্দ হয়ে চলে আসতেও চেয়েছিলেন। পরে সেই এসিসট্যান্ট তার হাত পা ধরে মাফ চেয়ে তাকে শান্ত করেছিল। এভাবে মান অভিমান ও সঙ্গী বাউলদের মনোক্ষুন্নের মধ্যেই প্রায় ঘন্টা খানেক তার গান রেকর্ডিং হয় হুমায়ূন স্যারের বাসায়। বাংলাদেশের কিংবদন্তী অভিনেতা বর্তমানে প্রয়াত আবুল খায়ের তাঁর স্বাক্ষাৎকার নেন। জলসা অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই এটি ছিল টেলিভিশনে শাহ আবদুল করিমের প্রথম অনুষ্ঠান। একজন লেখকের লেখায় সেদিন পড়লাম এই অনুষ্ঠানে গান প্রচারের জটিলতা থেকে শাহ আব্দুল করিমকে বিটিভিতে এনলিষ্টেড গীতিকার করা হয়। কারণ তখন বিটিভিতে এনলিষ্টেড আর্টিষ্ট বা গীতিকার ছাড়া কোন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া যেতো না এটি সত্যি। কিন্তু “জলসাঘর” অনুষ্ঠানটি ছিলো প্যাকেজ আওতার অনুষ্ঠান। প্যাকেজ অনুষ্ঠানে শিল্পী এনলিস্টেড করার কোন জটিলতা ছিলো না। যিনি ঘটনাটি লিখেছেন তিনি ভুল লিখেছেন। আরো ভুল লিখেছেন শাহ আবদুল করিমের ছেলের কথার সূত্র ধরে। স্যার ড্রাইভারের মাধ্যমে শাহ আবদুল করিমকে খামের মধ্যে সম্মানী পাঠিয়ে দিয়ে। এ বর্ণনা নির্জলা মিথ্যা। আমি আগেও বলছি স্যারের অগোচরে স্যারের এক এসিসট্যান্টের আচরণ এবং সঙ্গী বাউলরা গান গাওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় শাহ আবদুল করিমের কান ভারী করেছিলেন। আতœসম্মান বোধ সম্পন্ন করিম তাই এ কারণে কিছুটা ক্ষুব্দ হয়েছিলেন। এই লেখক তার আরো একটি লেখায় বলেছেন ছাতকের গিয়াস উদ্দিনের ‘মরিলে কান্দিসনা আমার দায়’ গানটি আরেকজন প্রথমে হুমায়ূন আহমেদকে শোনিয়েছেন। কিন্তু এই গানটিও করিমের ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এর মতো স্যারকে প্রথমে গেয়ে আমি শোনিয়েছিলাম। হুমায়ূন স্যারের ঘনিষ্টজন ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক সালেহ চৌধুরী ২০১৩ সনে অন্বেষা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘হুমায়ূন ও আমি’ গ্রন্থে এর বর্ণণা দিয়েছেন।
শাহ আবদুল করিমকে “জলসাঘর” অনুষ্ঠানে পৌছে দেওয়া থেকে বাড়ি পাঠানো পর্যন্ত আষ্টেপৃষ্টে জড়িত ছিলাম আমি। শাহ আব্দুল করিমকে পারিশ্রমিক এবং ঢাকায় আসা-যাওয়াসহ সকল ব্যয়ভার বহন করা হয় প্রোডাকশন থেকে। বাউল করিমের মৃত্যুর পর কিছু মানুষ এ ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে কিছু অতিরিক্ত বক্তব্য দিতে দেখা যায়। যাতে হুমায়ূন স্যারকে অনেক ক্ষেত্রে খাটো করা হয়েছে। তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। প্রকৃত পক্ষে স্যার বাউল করিমের প্রতি আন্তরিক ছিলেন। তিনি তার গানের এক মুগ্ধ এবং ভক্ত শ্রোতা ছিলেন। তার একাধিক নাটক সিনেমায় তার গান রেখে সেই পছন্দ ও মরমী সাধকদের প্রতি মুগ্ধতার পরিচয় দিয়েছিলেন দুই দশক আগে।
জলসাঘরে সুবীর নন্দী ‘আমি কুলহারা কলঙ্কিনী’ দিলরুবা খান ‘আমি ফুল বন্ধু ফুলের ভ্রমরা’ আমি ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, সেলিম চৌধুরী ‘এই দুনিয়া মায়ার জালে বান্দা’ এবং বেবী ‘নাজনিন তোমরা কুঞ্জ সাজাওগো’ গেয়েছিলাম। অনুষ্টানটি খুব জনপ্রিয় হয়। অনেক শিল্পী ও বাউল অনুরাগীদের মনে শাহ আবদুল করিমকে নিয়ে নতুন করে আগ্রহ তৈরি হয়। তার সঙ্গে মিশে তার কালজয়ী গানের সান্নিধ্যে আসেন। আধুনিক গানের জনপ্রিয় শিল্পীদের অনেকেই এই অনুষ্টান প্রচারের পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে গাওয়ার অনুমতি নিয়েছিল। এতে হুমায়ূন স্যার আরো খুশি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে স্যার শাহ আবদুল করিমের খোঁজ নিতেন আমাদের মাধ্যমে।
হুমায়ূন স্যার প্রতিভাবান তৈরি করতেন। আবার তিনি প্রতিভাকেও খুঁজে বের করতে পারতেন। বিটিভির জলসাঘরে শাহ আবদুল করিমের গান যখন আমাদের কণ্ঠে রেকর্ডিং হয়েছিল তখন বারী সিদ্দীকী বাশি বাজাতেন। বাশি বজিয়ে তিনি বেশ সুনামও কুড়ান। রেকর্ডিং এর এক ফাঁকে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে আমরা বিটিভি ভবনের ক্যাম্পাসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এসময় বারী সিদ্দিকী আমাদের গান শোনান। তার ভরাট কণ্ঠে ফোকগান শোনে আমরা মুগ্ধ হয়ে পড়ি। পরে একসময় আমরা হুমায়ূন স্যারকে বিষয়টি অবগত করি। স্যার শোনে বারী ভাইর গান শোনেন। ভাল লাগে তার। পরে স্যারের বাসার ছাদে বারী সিদ্দীকীর একক সঙ্গীত সন্ধ্যার আয়োজন করে তার গান শোনেছিলেন। পরে স্যারের সারা জাগানো ছবি শ্রাবণ মেঘের দিনে তাকে সুযোগ দেন। তিনি এ ছবিতে গান গেয়ে ঈর্ষনীয় জনপ্রিয়তা পান। এভাবে স্যার নতুন ও পুরাতনদের মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের সৃষ্টিকে জনপ্রিয় করে গেছেন।
লেখক: সঙ্গীত শিল্পী, অভিনেতা ও নির্মাতা। (অনুলিখন: শামস শামীম ও আ স ম মাসুম)

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!