1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৩ পূর্বাহ্ন

ভারতকে উড়িয়ে এশিয়ায় নারী ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

  • আপডেট টাইম :: রবিবার, ১০ জুন, ২০১৮, ১০.২৫ এএম
  • ৪৫১ বার পড়া হয়েছে

অনলাইন ডেক্স:
ডাউন দা উইকেটে এসে জাহানারা আলমের শট। বল মিড উইকেটে। পড়িমরি করে দ্রুত দুটি রান। নিজেকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়া। রান পুরো করে যখন মাটিতে শুয়ে জাহানারা, উড়ছেন তখন তার সতীর্থরা। ত্বরিত উঠে ডানা মেলে দিলেন জাহানারাও। উড়ছে আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেটই! শেষ বলে দুই রান নিয়ে ইতিহাস গড়া জয়। ভারতকে হারিয়ে মেয়েদের এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।

২১ বছর আগে মালয়েশিয়ায় আইসিসি ট্রফি জিতে নতুন উচ্চতায় উঠেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। সেই মালয়েশিয়াতেই রচিত হলো আরেকটি ইতিহাস। আগের সব আসরের চ্যাম্পিয়ন, প্রবল পরাক্রমশালী ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপ ক্রিকেটে শিরোপা জিতল বাংলাদেশের মেয়েরা।

কুয়ালা লামপুরে রোববার দারুণ বোলিংয়ে ভারতকে ১১২ রানে আটকে রাখে বাংলাদেশ। উত্তেজনাপূর্ণ রান তাড়ায় অনেক চড়াই-উৎরাই শেষে রোমাঞ্চকর জয় ধরা দেয় শেষ বলে।

এশিয়ার ক্রিকেটে প্রায় অপরাজেয় ভারতের বিপক্ষে ফাইনালের জয় স্রেফ একটি ম্যাচের অঘটন নয়। প্রাথমিক পর্বেও দারুণ খেলে ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এশিয়া কাপের ইতিহাসেই সেটি ছিল ভারতের প্রথম পরাজয়। সেই দলকেই আবার হারাল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার কাছে হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর পর টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে শিরোপা জিতল সালমা খাতুনের দল।

শেষ ২ ওভারে ১৩ রানের আপাত সহজ সমীকরণ অনেক কঠিন হয়ে পড়েছিল শেষের আগের ওভারে মাত্র ৪ রান আসায়। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৯ রান। ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে শেষ ওভারে ঠিক ৯ রানের চেষ্টায়ই ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশের ছেলেরা।

প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন সানজিদা। পরের বলে দুর্দান্ত ইনসাইড আউটে রুমানা আহমেদের চার। পরের বলে সিঙ্গেল। ৩ বলে যখন প্রয়োজন ৩ রান, ছক্কায় শেষ করতে গিয়ে সীমানায় ধরা সানজিদা।

আবার জমে ওঠে ম্যাচ। পরের বলে এক রান নেওয়ার পর রান আউট রুমানা। ২২ বলে ২৩ রানের মহামূল্য ইনিংস খেলেছেন। কিন্তু তার বিদায়ে শঙ্কা বাড়ে আরও। শেষ বলে স্ট্রাইকে যে নতুন ব্যাটার! সেই জাহানারার ব্যাটেই আসে স্বপ্নের জয়।

রান তাড়ায় বাংলাদেশকে মোটামুটি ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন শামিমা সুলতানা ও আয়েশা রহমান। তবে দুজনের ৩৫ রানে জুটির পরই জোড়া ধাক্কা। লেগ স্পিনার পুনম যাদবের পরপর দুই বলে আউট দুজন।

তৃতীয় উইকেটে সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ফারজানা হক ও নিগার সুলতানা। এই জুটিও ভাঙেন পুনম। ফিরিয়ে দেন প্রাথমিক পর্বে এই দুই দলের লড়াইয়ে ম্যাচ জেতানো ফিফটি করা ফারজানাকে।

দ্বাদশ ওভারে তখন বাংলাদেশের রান ৩ উইকেটে ৫৫। একটু শঙ্কায় দল। কিন্তু আতঙ্কিত না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় দলকে কিছুটা এগিয়ে নেন নিগার সুলতানা ও রুমানা আহমেদ।

৬ ওভারে যখন প্রয়োজন ৪৭ রান, ভারতের অভিজ্ঞতম বোলার ঝুলন গোস্বামির টানা তিন বলে চার মেরে সমীকরণ নাগালে নিয়ে আসেন নিগার।

তবে কাজটা শেষ করতে পারেননি তিনি। আবারও বাধা সেই পুনম। দায়টা যদিও নিগারের, আউট হন ফুলটস বলে। ২৪ বলে করেছেন ২৭ রান।

হাল ধরেন দলের সেরা ক্রিকেটার রুমানা। শেষ দিকে দ্রুত রান তোলার দায়িত্ব যার, সেই ফাহিমা ফেরেন ৭ বলে ৯ রান করে। নাটক পরে আরও জমে ওঠে শেষাঙ্কে গিয়ে। যেখানে শেষ হাসি বাংলাদেশের মেয়েদের।

ম্যাচের শুরুটাও বাংলাদেশের ছিল দুর্দান্ত। টস জিতে বোলিংয়ে নামা বাংলাদেশ শুরুতেই ভারতকে চমকে দিয়েছিল কৌশল পাল্টে। নতুন বলের নিয়মিত বোলার জাহানারা নয়, বাংলাদেশ ইনিংস শুরু করে নাহিদা আক্তারের বাঁহাতি স্পিনে। আরেক পাশে যথারীতি সালমার অফ স্পিন। ভারতের ইনিংস শুরুতেই গতিহারা।

নিজেদের অন্যতম সেরা ব্যাটার স্মৃতি মান্ধানাকে রান আউটে হারায় ভারত। বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে তারা তুলতে পারে কেবল ২১ রান। নাহিদার ৩ ওভার থেকে আসে মাত্র ৬ রান!

জাহানারা বোলিংয়ে এসেই দলকে এনে দেন বড় উইকেট। বোল্ড করেন দেন দিপ্তি শর্মাকে। খাদিজা তুল কুবরা ফিরিয়ে দেন এশিয়ার সফলতম ব্যাটার মিতালি রাজকে। রান নেওয়ার সময় দিক বদলে অবস্ট্রাক্টিং দা ফিল্ড আউট হয়ে ফেরেন অনুজা পাতিল। নবম ওভারে ভারতের রান তখন ৪ উইকেটে ৩২।

সেখান থেকে দলকে উদ্ধারের অভিযানে নামেন অধিনায়ক হারমানপ্রিত কাউর। জুটি গড়ার চেষ্টা করেন ভেদা কৃষ্ণমূর্তির সঙ্গে।

বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙতে নিজেকে দ্বিতীয় স্পেলে ফেরান অধিনায়ক সালমা। সফলও হন। সুইপ করত গিয়ে বোল্ড ভেদা।

রুমানা আহমেদ এরপর এক ওভারেই আউট করেন তনিয়া ভাটিয়া ও শিখা পান্ডেকে। ৭৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে আরও বিপদে ভারত।

কিন্তু হারমানপ্রিত ছিলেন টিকে। মেয়েদের ক্রিকেটে সময়ের সেরা ব্যাটারদের একজন তিনি। দারুণ অভিজ্ঞ, হাতে জোর ও শট অনেক। প্রয়োজনের সময় দারুণ খেলে আবারও এগিয়ে নিলেন দলকে।

শেষ দিকে দলকে এনে দিলেন দ্রুত রান। ৪২ বলে ৫৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে আউট হলেন ইনিংসের শেষ বলে। ভারত ততক্ষণে পেয়ে গেছে লড়ার মতো রান।

লড়াই হলোও তুমুল। ব্যাটিংয়ের পর বল হাতেও সফল ছিলেন হারমানপ্রিত। পেসার শিখা পাণ্ডে নিজের প্রথম ওভারেই চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন। বাধ্য হয়ে বল হাতে নিয়ে অনিয়মিত বোলার হারমানপ্রিত তুলে নেন দুটি উইকেটও।

কিন্তু দিনটি তবু ছিল না ভারত অধিনায়কের। শেষ ওভারে তাকে ও তার দলকে হতাশায় ডুবিয়ে বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ২০ ওভারে ১১২/৯ (মিতালি ১১, স্মৃতি ৭, দিপ্তি ৪, হারমানপ্রিত ৫৬, অনুজা ৩, ভেদা ১১, তানিয়া ১, শিখা ১, ঝুলন ১০, একতা ১*; নাহিদা ০/১২, সালমা ১/২৪, খাদিজা ২/২৩, জাহানারা ১/২৩, রুমানা ২/২২, ফাহিমা ০/৮)

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১১৩/৭ (শামিমা ১৬, আয়েশা ১৭, ফারজানা ১১, নিগার ২৭, রুমানা ২৩, ফাহিমা ৯, সানজিদা ৫ জাহানারা ২*, সালমা ০*; একতা ০/১৩, শিখা ০/১০, দিপ্তি ০/১৯, অনুজা ০/২৩, পুনম ৪/৯, ঝুলন ০/২০, হারমানপ্রিত ২/১৯)।

ফল: বাংলাদেশ ৩ উইকেটে জয়ী

প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: রুমানা আহমেদ

প্লেয়ার অব দা সিরিজ: হারমানপ্রিত কাউর

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!