বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি সতীশ চন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি বাণিজ্যের বিরুদ্ধে এবার ব্যবস্থা নিতে তৎপরতা শুরু করেছে প্রশাসন। গত সোমবার জেলা প্রশাসন দুটি স্কুলের ৫জন কোচিংবাজ শিক্ষকের কোচিং এর মাধ্যমে জমজমাট ভর্তি বাণিজ্য বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থাকায় লিখিত পত্র দিয়ে এ বিষয়ে তদন্তের কথা জানিয়েছে। প্রশাসনের এই চিঠি আসার পর কোচিংবাজ শিক্ষকরা অনেক অভিভাকের কোচিং ফি ফিরিয়ে দিয়েছেন। বুধবার সকালে দুটি স্কুলের কোচিংবাজ শিক্ষকরা কোচিং করাননি। তাদের নির্ধারিত কক্ষগুলো শিক্ষার্থী শুন্য দেখা গেছে। যে কারণে অন্যান্য দিনের মতো প্রাইভেট পড়–য়া শিক্ষার্থীদের দেখা যায়নি। জানা গেছে বুধবার তদন্ত করার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা সিলেটে জরুরি একটি মিটিংয়ে চলে যাওয়ায় তদন্তকাজ হয়নি।
অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে গত কয়েক বছর ধরে সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ে কয়েকজন শিক্ষক ৩য় শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নিয়ে কোচিং করানোর নামে ভর্তি বাণিজ্যে মেতে ওঠেন। অভিযোগ রয়েছে যারা প্রাইভেট পড়ে তাদের বেশি নম্বর দেওয়া হয়। জানা গেছে এ বিদ্যালয়ে প্রতিটি ভর্তি পরীক্ষায় এক হাজারেরও অধিক পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে থাকে। জেলার শ্রেষ্ট এ বিদ্যালয়টিতে সন্তানদের ভর্তি করাতেও তৎপর থাকেন অভিভাবকরা। তাই নিজেদের সন্তানদের যে কোনভাবেই তারা এই মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি করাতে চান। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক সাইনবোর্ড ব্যানার দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার কোচিং এর জন্য প্রচারণা চালান। এক মাসের জন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩-৫ হাজার টাকা নেন। মাত্র এক মাসের এই কোচিং এর লোড নিতে পারেনা কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ভর্তি পরীক্ষার আগে এই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভর্তির নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। জানা গেছে জেলা প্রশাসন এই বিষয়টি অবগত হয়ে গত সোমবার এ বিষয়ে জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষককে চিঠি দিয়েছে।
এদিকে একই সময়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকও। এই বিদ্যালয়ে প্রতি বছর এক হাজারেরও অধিক ছাত্রী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকেন। তবে অভিভাবকদের আবেগকে পূজি করে ষষ্ট শ্রেণি ভর্তিচ্ছু কোমলমতি ছাত্রীদের ভর্তির নামে প্রাইভেটে উদ্ধুদ্ধ করেন কতিপয় শিক্ষক। তারাও ছাত্রী প্রতি ৩-৫ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন। সাইনবোর্ড ব্যানার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা। এভাবে কয়েকজন শিক্ষক এই ভর্তি মওসুমে মাত্র ১০-১২ দিন পড়িয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। জানা গেছে জেলা প্রশাসন এই লাগাহীন ভর্তি বাণিজ্যের বিষয়টি অবগত হয়ে এই বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে অভিযুক্ত করে পত্র দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ভর্তি বাণিজ্যের বিষয়ে তদন্ত করার কথা জানিয়েছে প্রশাসন।
এদিকে দুটি বিদ্যালয়ের কোচিংবাজ শিক্ষকরা পত্র পাওয়ার পর গত বুধবার কোন কোচিং করেননি তারা। নতুন করে ভর্তি পরীক্ষার্থীদেরও কোচিংয়ের জন্য নেননি। আগাম ভর্তি নিয়ে এডভান্স টাকা নিয়েছিলেন তাদের টাকাও ফিরিয়ে দিয়েছেন।
শহরের অভিভাক চন্দন রায় বলেন, আমার ৬ষ্ট শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু নাতনিকে কয়েকদিন আগে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল ছেলে। এরজন্য এডভান্স টাকা নিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষক। আজ আমার নাতনি জানিয়েছেন শিক্ষক কোচিং না করে টাকা ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছেন।
মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বুধবার সকাল থেকেই কোচিংবাজ শিক্ষকদের বাসা ও কোচিং এলাকায় গিয়ে দেখেছি কোন শিক্ষার্থী নেই। প্রশাসনের তদন্তের খবরে তারা গতকাল শিক্ষার্থীদের না আসার জন্য বলে দিয়েছিলেন। তাই রাস্তাঘাটে সকালে প্রাইভেট পড়–য়া কোন শিক্ষার্থীদের দেখা যায়নি। তিনি বলেন, শুধু দুটি বিদ্যালয়ই নয় প্রতিটি বিদ্যালয়ের কোচিংবাজ শিক্ষকদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজ মাসুক আহমদ চৌধুরী বলেন, আমার বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে ভর্তি বাণিজ্য বিষয়ে চিঠি দিয়েছে প্রশাসন। আমাকেও এ বিষয়ে পত্র দিয়ে অবগত করা হয়েছে। পত্রে প্রশাসনের কর্মকর্তা এ বিষয়ে তদন্ত করার কথা জানিয়েছেন।
সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজুল হক মোল্লা বলেন, আমার বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষককে ভর্তি বাণিজ্য বিষয়ে তদন্ত করতে প্রশাসন চিঠি দিয়েছে। আমাকেও এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের যে কোন বিষয়েই প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে আমি প্রস্তুত।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইটি) মো. শফিউল আলম বলেন, আমরা এ বিষয়ে দুটি বিদ্যালয়ের ৫জন শিক্ষককে চিঠি দিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত হবে। গতকাল তদন্তের কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অন্য একটি জরুরি কাজে যুক্ত করায় তদন্ত হয়নি। তবে শিগ্রই এ বিষয়ে তদন্ত হবে। তিনি বলেন, কোচিং বন্ধ করতে সবাইকে নিয়েই আমরা কাজ করব।