হাওর ডেস্ক ::
জাতীয় ফুল শাপলা আচ্ছাদিত রাজধানীর রমনা কালি মন্দির পুকুরের মাঝে ভাসছে লক্ষ্মী-নারায়ণের মূর্তি। তাই পুকুর ঘাটেই ভক্ত-দর্শনার্থীদের ভীড় বেশী। ভিতরে তখন সাজ-সজ্জার কাজ চলছে। মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের কারণে সামনের রাস্তায় সাজ-সজ্জা না থাকলেও গেট থেকে মন্দির পর্যন্ত বাহারি সমাজে সাজানো হয়েছে। চোখ ধাধানো আলোক-সজ্জাও করা হয়েছে।
আজ সোমবার বিকেলে মন্দিরে গিয়ে এ দৃশ্য পড়েছে। দেবীর বোধন ও ষষ্টী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। সোমবার সায়ংকালে (সন্ধ্যায়) দুর্গোতিনাশিনী দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস হয়েছে। মন্দির ও মণ্ডপে বোধনের ঘট স্থাপন করা হয়েছে। তিথির কারণে একইদিনে ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে উলুধ্বনি, শঙ্খনাদ আর কাসর ঘণ্টা বাজিয়ে ষষ্টী পূজা হয়েছে। সকালে মহাষষ্ঠী পূজা চলাকালে ঢাকের বোল, কাঁসর ঘণ্টা ও শাঁখের ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠে দেশের পূজামণ্ডপগুলো। আনুষ্ঠানিক পূজার প্রথম দিনেই দেবী দুর্গার আগমনে ভক্তকূলকে উচ্ছসিত দেখা গেছে। সন্ধ্যা নামতেই রাজধানীর মন্দিরগুলোতে ভীড় বাড়তে থাকে।
পঞ্জিকা মতে, গত ৬ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। মহাষষ্টীর পর আগামীকাল মঙ্গলবার মহাসপ্তমী, ১৩ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ১৪ অক্টোবর মহানবমী এবং ১৫ অক্টোবর মহাদশমী পূজা হবে। মঙ্গলবার মহাসপ্তমীর দিনে সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও মহাসপ্তমী বিহিত পূজা হবে। আগামী বুধবার মহাঅষ্টমীর দিনে সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে শ্রী শ্রী দুর্গাদেবীর অষ্টমাদি কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা হবে।
মহাষষ্টীর দিনে শ্রী শ্রী রমনা কালীমন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, পূজা শুরু হলেও প্যান্ডেল ও বাইরের সাজসজ্জার পাশাপাশি শেষ মুহূর্তের ধোয়া-মোছার কাজ চলছে। জগন্নাথ হলের মণ্ডপে বেদির চারপাশে ককশিটের তৈরি ফুলে ফুলে সাজিয়ে তুলছেন চারুকলার একদল শিক্ষার্থী। রমনা কালি মন্দিরেও সাজ-সজ্জার কাজ চলছে। তবে সেখানে ভীড় কিছুটা বেশী। এখানে সাজ-সজ্জা ও দৃষ্টি নন্দন পরিবেশের পাশাপাশি মন্দিরের সামনে ছোট আকারে মেলাও বসেছে। মন্দিরে প্রবেশমূখে হাত ধোয়ার ও স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই শ্রী শ্রী রমনা কালীমন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রম পরিচালনা পরিষদের পূজা আয়োজনের নেতৃত্বে থাকছেন দুই নারী। এই কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন চৈতী রাণী বিশ্বাস ও তিলোত্তমা সিকদার।
শ্রী শ্রী রমনা কালীমন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রম পরিচালনা পরিষদের সভাপতি উৎপল সাহা জানান, করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ায় এবার আয়োজন গত বছরের থেকে বড়। নারীরা এই আয়োজনের দায়িত্ব নিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় এবার দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে, সেটা বিবেচনায় রেখে অঞ্জলি প্রদানের পর্ব আলাদা আলাদা গ্রুপে করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাস্ক পরা বাধ্যতামূল করা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি মন্দিরের স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করবেন বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি জানান, বর্তমান সরকার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসার পর প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে পূজার সংখ্যা বেড়েছে। এ বছর সারাদেশে ৩২ হাজার ১১৮টি মন্ডপে হবে দুর্গাপূজা। গত বছরের চেয়ে এবার পূজার সংখ্যা বেড়েছে এক হাজার ৯০৫টি। ঢাকা মহানগরে পূজা হবে ২৩৮টি। তিনি আরো জানান, করোনা মহামারির কারণে উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে ভক্তদের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে। এ বছর পূজায় কোনো সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকছে না। মন্দিরের প্রবেশ পথে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা লাইন রাখা হবে।
উল্লেখ্য, করোনা সতর্কতার পাশাপাশি রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামন্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র্যাব ও বিডিআর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।