হাওর ডেস্ক ::
সাইফউদ্দিনের ইনসুইঙ্গিং ইয়র্কারে উপড়ে গেল চার্লটন শুমার স্টাম্প। বাংলাদেশের ৩২২ রানের পাহাড়ের দিকে ছুটে ২১৮-তেই শেষ জিম্বাবুয়ে। আগের ম্যাচের মতো মাঝে-মধ্যে একটু আগুন চোখে তাকানো জিম্বাবুয়েকে শেষ পর্যন্ত বিধ্বস্তই হতে হয়েছে। ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে হেরেছে ১২৩ রানে। শুক্রবার অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি মুর্তজার বিদায়ী ম্যাচে তাকে বড় জয়ই উপহার দিয়েছেন সতীর্থরা। উপহার দিয়েছেন সিরিজ জয়, প্রতিপক্ষকে ধবলধোলাই করেই।
মাশরাফির আরও কিছু প্রাপ্য ছিল সতীর্থদের কাছ থেকে। চোটজর্জর শরীর নিয়ে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে জয়ের স্বাদ এনে দিয়ে, সতীর্থদের অনুপ্রাণিত করে, যে অধিনায়ক বাংলাদেশের ক্রিকেটে মহাধিনায়কের আসনে বসে গেছেন, কী করে ভাবলেন সতীর্থরা তাকে অধিনায়কত্বের শেষপ্রহরে কিছু দেবেন না? ম্যাচ শেষ হওয়ার খানিক পর মাশরাফির আশ্রয় হলো তামিম ইকবালের কাঁধে। কাঁধ ছুঁইয়ে তামিমের ভার কিছুটা লাঘব করলেন মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম ও মাহমুদউল্লাহরা।
তারপর… চমক বাকি ছিল। এলো সেই সময়। মাশরাফি সবিস্ময়ে তাকিয়ে দেখলেন তার সহখেলোয়াড়দের গায়ের জার্সিটা পাল্টে গেছে। লাল-সুবজ জার্সিতে ইংরেজীতে লেখা, ‘থ্যাংক ইউ অধিনায়ক।’ জার্সির নম্বরটা অনুমান করুন তো! ঠিক ধরেছেন, ২। যে নম্বরটি গায়ে নিয়েই মাশরাফি এতদিন অধিনায়কত্ব করেছেন।
প্রায় একইসঙ্গে ক্যামেরা ঘুরলো গ্যালারিতে। সবুজ জার্সির অরণ্যে অনেকগুলোতেই লেখা ওই ভালোলাগা শব্দমালা, ‘অধিনায়ক তোমাকে ধন্যবাদ’। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড অসাধারণ এক অধিনায়কের বিদায়ী ম্যাচে বিশেষ কিছু করবে বলে ভেবেছিল কি না জানা যায়নি। তবে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে তুলে দিতে দেখা গেছে একটি ধাতব ক্রেস্ট, অধিনায়ক হিসেবে বিদায়ী ম্যাচের একটি স্মারক।
মাশরাফিকে শ্রদ্ধায়-ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছেন তার সতীর্থরা। অধিনায়ক মাশরাফির শেষ ম্যাচে খেলতে না পারার একটা দু:খ হয়তো থেকে গেল মুশফিকুর রহিমের কাছে। তবে সেটিকে একেবারেই মাটিচাপা দিয়ে (পড়ুন বুকে চাপা) দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বলেছেন, ‘শুধু খেলোয়াড় হিসেবেই নন, মানুষ হিসেবেও তিনি (মাশরাফি) অসাধারণ। একজন খেলোয়াড় হিসেবে তার খেলা চালিয়ে যাওয়া উচিত। যেভাবে তিনি বোলিং করলেন, আমার তো মনে হয় খেলোয়াড় হিসেবে আরও দুই বছর তিনি অনায়াসেই খেলে যেতে পারবেন। তার জন্য শুভকামনা।’ এ ম্যাচে বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৯২ রানের পার্টনারশিপ গড়েছেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। দুজনই শ্রদ্ধার মালা পরিয়েছেন মাশরাফির গলায়। সব সংস্করণের আন্তর্জাতিক ম্যাচ মিলিয়ে বাংলাদেশের সর্বাধিক রানের মালিক তামিম আপ্লুত মাশরাফিতে, ‘তিনি অবিশ্বাস্য। ২০১৪ সালে আবার যখন তিনি অধিনায়ক হন, আমরা তো কোথাও ছিলাম না। সেখান থেকে তিনি আমাদের এমন একটা স্তরে নিয়ে গেছেন যে সারাবিশ্বই আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। বহু লোক আমাকে বাদ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি সবসময়ই আমার পাশে থেকেছেন।
এ ম্যাচেই ১৭৬ রান করে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংসের মালিক হওয়া লিটন দাসের কাছে মাশরাফির আসন অনেক উঁচুতে, ‘আমার হৃদয়ের বিশেষ জায়গা জুড়ে আছেন তিনি। তার অধীনেই আমার অভিষেক হয়। সবসময় তিনি আমাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। এরকম একজন অধিনায়ক পাওয়া বিরল ব্যাপার। আমরা তাকে মিস করবো, কারণ যখন তিনি অধিনায়কত্ব করতেন সিনিয়র-জুনিয়রের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ করতেন না।’
বাংলাদেশের বর্তমান টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক, ক’দিন পরই যার নেতৃত্বে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল, সেই মাহমুদউল্লাহও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মাশরাফিকে, ‘তিনি ছিলেন ভাই এবং বন্ধুর মতো। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেক দিয়েছেন তিনি। আমাদের দারুণভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। যখন তিনি শুরু করেন, বাংলাদেশ একটু হাবুডুবুই খাচ্ছিলো।’
মাঠের মধ্যেই যতটা পারা যায় সতীর্থদের ভালোবাসা ফিরিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি, ‘এটা আমার জন্য বিশেষ সম্মানের। এই ছেলেগুলো অসাধারণ। দলের জন্য সর্বস্ব নিংড়ে দিয়েছে তারা। সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই।’
আইসিসির নিষেধাজ্ঞা মাথায় বাইরে থাকা সাকিব আল হাসানকে আলাদাভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মাশরাফি, ‘সে যদি এখানে থাকতো, এটা হয়তো অন্যরকম হতো। তবে সবাইকেই ধন্যবাদ জানাই আমি।’