হাওর ডেস্ক ::
ইয়ান বিশপ তাঁর নামই দিয়ে ফেলেছেন, ‘ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক’।
প্রচণ্ড স্নায়ুচাপ সামলে ৭৭ বলে অপরাজিত ৪৩ রানের বিশ্ব জেতানো ইনিংসে ম্যাচ সেরা হওয়ার পর এমন বিশেষণে বিশেষায়িত আকবর আলী এই বয়সেও পরিণত মানসিকতার উদাহরণ হওয়ার মতো। জয় নিশ্চিত হওয়ার কিছুক্ষণ আগেও দেখা গেছে এরই এক ঝলক।
জিততে তখন মাত্র ৬ রান লাগে বাংলাদেশের। ওই সময়ই সুশান্ত শর্মার বলে বাউন্ডারি মারা রাকিবুল হাসান আগাম উৎসবেই মেতে উঠেছিলেন। যা ভারতের বিপক্ষে ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ম্যাচের মুশফিকুর রহিমের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল। ক্ষণিকের মধ্যেই নিজেকে সামলেও নিলেন এই তরুণ ক্রিকেটার। দেখা গেল, অধিনায়ক আকবর এগিয়ে এসেছেন এবং রাকিবুলকে কিছু একটা বলেছেনও। হয়তো এটিই বলেছেন যে, ‘কাজ এখনো শেষ হয়নি।’
সেই কাজও রাকিবুলের ব্যাটেই শেষ হলো। জয় নিশ্চিত করা সিঙ্গেলটি আসতেই জয়ের উচ্ছ্বাসে আর কোনো বাধাও ছিল না। পচেফস্ট্রুমের সেনউইস পার্কের সেই উৎসবে শামিল হলেন দর্শকরাও। কেউ সেই সমবেত উৎসবের মধ্যমনি নয়। বরং পুরো দলই একসঙ্গে দিল ‘ল্যাপ অব অনার’। বোধহয় এটিই বোঝাতে যে এই দলটি একটি পরিবার। এই পরিবারের সামর্থ্যের প্রমাণ দেওয়ার ঘোষণাও থাকল ২৫ বলে অপরাজিত ৯ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলা রাকিবুলের কথায়, ‘আমরা এখানে (দক্ষিণ আফ্রিকায়) কিছু একটা প্রমাণ করতে এসেছিলাম। এবং সেটি আমরা আজ প্রমাণ করলামও।’
এই পরিবারে যে পারফরমারের অভাব নেই কোনো, সেটির প্রমাণও তো দেওয়া গেছে। একেকদিন একেকজনের ব্যাটে একেকটি বাধা পেরিয়েছে দল। এই আসরের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত মাহমুদুল হাসান জয়ের সর্বোচ্চ অপরাজিত ৩৮ রানের। উল্লেখযোগ্য কিছু না করা এই ব্যাটসম্যানই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে করেন সেঞ্চুরি। অধিনায়ক আকবরেরও ফাইনালের আগ পর্যন্ত ছিল না বিশেষ কোনো ইনিংস। অথচ দলের সংকটে ফাইনালের মহামঞ্চেই খেললেন ইতিহাস গড়া এক ইনিংস। সব কিছুকে সহজ করে দেখার মানসিকতাই হয়তো তাঁকে উত্তেজনার কড়াই থেকে অক্ষত অবস্থায় তুলে আনতে পেরেছে, “যখন ব্যাট করতে নামি, তখন অন্য প্রান্তের ব্যাটসম্যানকে বলেছিলাম ‘আমাদের জেতার জন্য একটা জুটি দরকার। কোনো আলগা শট খেলার দরকার নেই। উইকেটে থাকলেই জেতার রানটা হয়ে যাবে।’ পরিকল্পনটা ছিল খুব সাধারণ। আমি এমন একজন মানুষ যে সব কিছু সহজভাবে করতে পছন্দ করি। আসরের শুরুর দিকগুলোতে খুব একটা ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাচ্ছিলাম না, পেলেও কাজে লাগাতে পারছিলাম না। ফাইনালে সুযোগটা হয়ে গেল।”
সেই সুযোগেই ব্যাট হাতে পুরো দলকে নিয়ে ঢুকে পড়লেন ইতিহাসে। যে দলের খেলোয়াড়দের ফিটনেসের দিকটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা রিচার্ড স্টয়েনারের এমন প্রতিক্রিয়াই তাই খুব স্বাভাবিক, ‘আমার জীবনের সেরা ১২টি মাস, কাজের সেরা সময়টা কেটেছে এই ছেলেদের সঙ্গে। মাঠে এবং মাঠের বাইরে, এই ছেলেগুলো অসাধারণ, দুর্দান্ত। আমাদের দারুণ একটা বন্ধন তৈরি হয়েছে সবার মাঝে, পুরো পরিবারের মতো। এই মুহূর্তটা ছেলেদের প্রাপ্য, ওরা এটা অর্জন করেছে। আমি ওদের কাছ থেকে শতভাগ চেয়েছিলাম, ওরা ১৫০% দিয়েছে।’ প্রয়োজনের সময় কেউ না কেউ ঝলসে উঠেছেন। ফাইনালে যেমন ঝলসালেন আকবরও। অধিনায়ক এমন দিনে পারফরম করলে বিশেষণে বিশেষায়িত তো হবেনই!