বিশেষ প্রতিনিধি::
দিনমজুর সুকেশ বর্মণ আর প্রণতি রাণী সুনামগঞ্জের ঝাউয়ার হাওর সংলগ্ন বিসিক শিল্পনগরী ঘেষা একটি ভাড়াটে খুপড়ি ঘরে বসবাস করেন। দিনমজুরি করেই তিন সন্তান নিয়ে জীবন চলে তাদের। গত তিনদিন ধরে তাদের ঘরে পানি। পানি কমবে এই আশায় সন্তানদের নিয়েই খাটে নিজেরা জেগে উদ্বেগে রাত পার করেছেন। পানি না কমায় উদ্বিগ্ন দম্পতি নিরাপদ আশ্রয়ের খুজে ঘরে ছেড়ে বেড়িয়ে যান সোমবার বিকেলে। তাদের প্রতিবেশি আরো তিনটি পরিবার দুদিন আগেই বাসা ছেড়ে চলে গেছে। একই এলাকার রমেছা ও তার স্বামীও দিনমজুর। তার খুপড়িঘরের চারদিকে থৈতৈ পানি। উঠোনেও পানি। ঘরে পানি ছুই ছুই করছে। একটি কলাগাছের ভেলা বানিয়ে রাস্তায় ওঠতে যাতায়াত করেন তারা। এই এলাকায় অন্তত অর্ধশত পরিবার গত তিনদিন ধরে পানিবন্দি থাকলেও তাদের কেউই কোন সহায়তা পাননি বলে জানিয়েছেন। এভাবে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার বন্যা কবলিত মানুষজন দুর্ভোগের সঙ্গে বসবাস করছেন।
প্রনতি রাণী বর্মণ বলেন, গত শনিবার আমরার ঘরোর কান্দাত পানি আছিল। রইব্বার ঘরো ডুকছে। সুমবার ঘরের পানি আরো বাড়ছে। ইতার লায় বাইচ্চা কাইচ্চারে লইয়া আরেক খানো যায়রামগি। তিনি বলেন, তিনদিন ধরি রান্দাবাড়া খরতাম পাররাম না। বাজার তনি কিইন্যা আইন্যা বাইচ্চারারে খাবায়রাম। আমরা সরকারি কুন্তা পাইছিনা। প্রণতি প্লাবিত ঘর থেকে তাদের ব্যবহৃত বিছানাপত্র, চুলো, বাসন কোসন সরাচ্ছিলেন প্রতিবেশিদের সহায়তায়। প্রতিবেশিরা এর আগেই যে যার মতো চলে গেছেন।
কালিপুরের রমেছা বেগম বলেন, তিনদিন ধরি ঘরো আটু পানি। দোহানো আইছি বুরা দিয়া হুরুতারে কুন্তা কিইন্যা খাবাইতে। পানির তলে থাহি। কুন্তা পাইনা। রমেছা জানালেন তিনিও নিরাপদ আশ্রয় খুজছেন। এর পাশেই আরো তিনটি পরিবারকে দেখা গেল তাদের কাছা ঘরে হাটু পানি। পাশের বিসিক শিল্পনগরির পরিত্যাক্ত একটি ভবনের বারান্দায় তারা আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানালেন। সরেজমিন পুরো কালিপুরই প্লাবিত দেখা গেছে।
এভাবে বন্যায় যাদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে সেসব প্লাবিতদের মধ্যে যারা হতদরিদ্র তারা উচু আশ্রয়ের খুজে বের হতে দেখা গেছে। কেউ সরকারি পরিত্যাক্ত অফিসের বারান্দায়, কেউ সড়কে কেউবা আতœীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। এভাবে শুধু কালিপুরইই পৌর শহরের নবীনগর এলাকার বস্তিগুলোও প্লাবিত। সোমবার দুপুরে জেলা পরিষদের পিছনের পুকুরের পাড়ে গিয়ে দেখা যায় ৭-৮টি পরিবার পুকুর পাড়ে কাচা অস্থায়ী ঘর করে বসবাস করে। তাদের সবগুলো ঘরেই পানি। আলাপকালে তারাও কোন সহযোগিতা পাননি বলে জানান। শহরের প্রত্যন্ত পাড়ায় বসবাসরত এসব হতদরিদ্র মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করেছেন বলে জানিয়েছেন। প্রশাসনিক কোন সহায়তা তারা পাচ্ছেন না বলেও জানান। শুধু প্রশাসনিক সহায়তাই নয় হতদরিদ্র পানিবন্দি এসব লোকজন কোন বেসরকারি সহযোগিতাও পাচ্ছেনা। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ফরিদুল হক বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আরো ১০ লক্ষ টাকা, ৩০০ মে.টন চাল ও ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এগুলো বণ্ঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
পৌর মেয়র নাদের বখত বলেন, পৌর শহরে অনেক মানুষ পানিবন্দি। অনেক অসহায় পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আমি প্রশাসনকে ত্রাণ সহায়তার জন্য আবেদন করেছি। প্রশাসন জানিয়েছে এভাবে পৌরসভাকে ত্রাণ দেয়ার নিয়ম নেই। তিনি বলেন, দুর্যোগে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে অসহায় মানুষ ত্রাণ পাওয়ার নৈতিক অধিকার রাখে।