1. haornews@gmail.com : admin :
  2. editor@haor24.net : Haor 24 : Haor 24
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

শাল্লার যোদ্ধাপরাধ মামলার আসামি জোবায়ের মনিরের জামিন বাতিল

  • আপডেট টাইম :: রবিবার, ৯ আগস্ট, ২০২০, ৬.৩৪ পিএম
  • ২০২ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি::
দৈনিক কালের কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের পর সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার যোদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামি জোবায়ের মনির অসুস্থতা দেখিয়ে আদালত থেকে গৃহজামিন নিয়ে এলাকায় এসে মামলার বাদি, সাক্ষীর বাড়ির সামনে এসে নৌবিহারসহ ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে তার জামিন বাতিল করেছে আদালত। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলার প্রসিকিউটরের আবেদনের প্রেক্ষিতে রবিবার জামিন বাতিল করে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
মামলার প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমের দৈনিক কালের কণ্ঠের গত ৪ আগস্টের অনলাইনের সচিত্র সংবাদটি যুক্ত করে যুদ্ধারাধ মামলায় জামিনে থাকা আসামি জোবায়ের মনিরের জামিন বাতিলে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন জোবায়ের মনির সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ঈদের আগে তার গ্রামের বাড়ি শাল্লা উপজেলার দৌলতপুরে এসে নৌবিহার করেন। মামলার বাদি স্বাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখান। এ নিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠে গত ৪ আগস্ট অনলাইনে সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। ৬ আগস্ট প্রিন্ট লাইনেও সংবাদ প্রকাশিত হয়। জোবায়ের মনিরের নৌবিহারের পর এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছিল। তার পরিবার এলাকায় আর্থিক, সামাজিকভাবে এককভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকায় সবসময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজন ও একাত্তরের শহিদ পরিবারের লোকজন ভয়-ভীতির মধ্যে থাকে এমন অভিযোগ আছে।
উল্লেখ্য জোবায়ের মনির গত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন। এর আগে তিনি এলাকায় হেলিকপ্টারে এসে টাকা ছড়িয়ে দম্বোক্তি করেছিলেন তিনি হাওরাঞ্চলের শীর্ষ রাজাকার আব্দুল খালেকের পুত্র। রাজাকারের পুত্র হিসেবে তিনি গর্বিত এমন দম্বোক্তিও করেন। তার এসব দম্ভোক্তির খবর বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল।
২০১৬ সনে ট্রাইব্যুনালে একাত্তরে গণহত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে জোবায়ের মনির, তার ভাই প্রদীপ মনির ও চাচা মুকিত মনিরসহ যোদ্ধাপরাধে সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ দায়ের হয়। এলাকার শহিদ পরিবারের স্বজনসহ ভুক্তভোগীরা এসব অভিযোগ করেন। ওই বছরের ২১ মার্চ অভিযোগের তদন্তকাজ শুরু করে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দিরাই উপজেলার পেরুয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা রজনী দাসের দায়েরকৃত মামলায় ২০১৮ সনের ২০ ডিসেম্বর জোবায়ের মনির, জাকির হোসেন, তোতা মিয়া টেইলার, সিদ্দিকুর রহমান, আব্দুল জলিল, আব্দুর রশিদসহ অভিযুক্ত ৬ যোদ্ধাপরাধীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযোগ দায়েরের পরই আমেরিকায় পালিয়ে যায় অভিযুক্ত যোদ্ধাপরাধী জুনেদ মনির প্রদীপ, যোদ্ধাপরাধী মামলায় দ-প্রাপ্ত কামরুজ্জামানের আইনজীবী ও ইসলামি ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি শিশির মনিরের বাবা মুকিত মনির। ২০১৯ সালের ১৭ জুন তদন্ত সংস্থা একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জোবায়ের মনিরসহ ১১ জন জড়িত বলে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করে। এসব ঘটনার পরই ওই প্রভাবশালী পরিবারের ভয়ে অভিযোগকারীদের অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।
জানা গেছে, গ্রেপ্তারের পরেই জোবায়ের মনির নানা ছুতোয় জামিন নেওয়ার চেষ্টা চেষ্টা করে। অবশেষে গত ফেব্রুয়ারিতে আদালতকে অসুস্থতার সাজানো তথ্য দিয়ে ‘টাওন জামিন বা গৃহজামিন’ মঞ্জুর করিয়ে নেয়। শর্তমতে শহরে বাসায় অবস্থানের নির্দেশনা দিয়ে জামিন মঞ্জুর করা হলেও সুস্থ জোবায়ের মনির প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ান। এবার ঈদুল আজহার আগে শাল্লা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে এসে ঈদের জামাত আদায়সহ একাধিক পশু কোরবানি দিয়েছেন। তাছাড়া ঈদের পরদিন স্পিডবোট ও নৌকা নিয়ে নৌবিহার করে আনন্দ ফূর্তি করেছেন বিশাল বাহিনী নিয়ে। তার নৌবিহারের নৌকাটি যোদ্ধাপরাধ মামলার স্বাক্ষীদের বাড়ির কাছে এসে পরোক্ষভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে গেছে। অনেককে প্রলোভন দেখিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আন্তর্জাতিক অরাধ ট্রাইব্যুনালের এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. নূর হোসেন বলেন, যোদ্ধাপরাধী হিসেবে জোবায়ের মনিরসহ ১১ জনের অপরাধের অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালে জমা দিয়েছি আমরা। এর মধ্যে ৬জন গ্রেপ্তার হয়েছে। জোবায়ের মনির অসুস্থতার কথা বলে আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় এসে নৌবিহার করেছিল। স্থানীয়দের কাছ থেকে এই অভিযোগ পেয়ে সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম আমরা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর চমন রেজিয়া বলেন, আমরা কালের কণ্ঠের পত্রিকার সংবাদসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে জোবায়ের মনিরের জামিন বাতিলের আবেদন করেছিলাম। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন।
উল্লেখ্য ১৯৭১ সনের ৪ ডিসেম্বর হাওরাঞ্চলের শীর্ষ দালাল আব্দুল খালেকের নির্দেশে পেরুয়া, উজানগাও, শ্যামারচরে ভয়াবহ গণহত্যা, অগ্নিসংযোগসহ যোদ্ধাপরাধ সংগঠিত হয়। শ্যামারচর বাজারের স্কুলের সামনে ২৭ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে লাইন ধরিয়ে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। পরে কয়েকটি পল্লিতে প্রায় ৩ শতাধিক প্রশিক্ষিত রাজাকার বাহিনী দিয়ে নারীদের ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। এই গণহত্যায় নেতৃত্ব দেয় দালাল আব্দুল খালেকের ভাই মুকিত মনির, ছেলে প্রদীপ মনির জুনেদ, জোবায়ের মনিরসহ প্রশিক্ষিত রাজাকার বাহিনী।

Print Friendly, PDF & Email

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
themesbazarhaor24net
© All rights reserved © 2019-2024 haor24.net
Theme Download From ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!