বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার কথিত চোরাপল্লী নারকিলা গ্রামের চুরি, ডাকাতি ও মাদক মামলায় অভিযুক্ত চোররা আর চুরি করবেনা মর্মে থানায় এসে আতœসমর্পন করেছে। থানার ওসি তাদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করেছেন। তাদেরকে ঘৃণার এই পেশা থেকে ফিরে এসে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে সরকারি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। পরে তাদেরকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভূক্ত মামলায় জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বুধবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে নারকিলা গ্রামটি উপজেলার পুরনো বসতি হলেও আর্ত-সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে সবদিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। চোর বলে তাদেরকে এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় অপবাদ দিয়ে মানসিকভাবে লাঞ্চিত করে। এই গ্রামের পশ্চিমপাড়ার একটি সম্প্রদায় বংশ পরম্পরায় চুরি পেশায় নিয়োজিত ছিল। তবে সময়ের প্রয়োজনে তাদের বেশিরভাগই সেই পেশা ছেড়ে দিয়েছে। তারা দিন মজুরি, হাওরে মাছ ধরে, গার্মেন্টে চাকুরি করে, বালু-পাথর মহালে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে এখন। তবে মুষ্টিমেয় কিছু লোক এখনো পুরনো পেশায় রয়ে গেছে বলে অভিযোগ আছে। তারা চুরি পেশার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে চোলাই মদ তৈরি করে বিক্রি করে থাকে। ফলে গ্রামে মামলা-মোকদ্দমা লেগেই আছে। তাছাড়া হতদরিদ্র নারকিলা গ্রামের পশ্চিম পাড়ার লোকদের সামাজিক ঘৃণা থেকে সরকারি সহায়তা দেননা স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। করোনা ও বন্যায় তারা অসহায় হলেও সরকারি সহায়তা বরাদ্দের পরও তাদেরকে সহায়তা দেননি স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এমন অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে গ্রামে পরিবর্তনের লক্ষ্যে, ঘৃণার জীবন ছেড়ে আসার লক্ষ্যে তাদের প্রতি আহ্বান জানান শাল্লা থানার ওসি সনজুর মোরশেদ শাহিন। তার আহ্বানে বুধবার গ্রামের চুরি, ডাকাতি ও মাদক মামলার ১১জন আসামি স্বেচ্ছায় থানায় এসে আতœসমর্পন করেছে। এসময় ওসি তাদেরকে ফুল দিয়ে বরণ করেন।
নারকিলা গ্রামের মাদকবিরোধী কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত কলেজ ছাত্র পাবেল মিয়া বলেন, শাল্লা থানার ওসি স্যারের নির্দেশে আমাদের পাড়ার বিভিন্ন মামলার ১১জন আসামি আতœসমর্পন করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের এই অবহেলিত পাড়ার দিকে কারো দৃষ্টি নেই। খুবই হতদরিদ্র অবস্থায় জীবন যাপন করি আমরা। সরকার করোনা ও বন্যায় অনেক ত্রাণ দিলেও আমাদের পাড়ায় সেটা দেওয়া হয়নি। যুগযুগ ধরে আমাদেরকে সরকারি সহায়তা বঞ্চিত করা হচ্ছে।
শাল্লা থানার ওসি সনজুর মোরশেদ শাহিন বলেন, নারকিলা গ্রামের একটি অংশের কিছু মানুষের পেশা হলো চুরি, ডাকাতি ও মাদক বিক্রি। আজ তারা ভালো হওয়ার শপথে থানায় এসে আতœসমর্পন করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। আমরা তাদের ফুল দিয়ে বরণ করেছি। তিনি বলেন, হত দরিদ্র এই গ্রামবাসীর পাশে দাড়ানো উচিত। কারণ তারা নানাভাবেই বঞ্চনার শিকার। যে কারণে মনস্তাত্বিকভাবে তারা ক্ষুব্দ হয়ে এসব কাজ করতে পারে। আতœসমর্পনের পর আমরা তাদের আদালতে প্রেরণ করেছি।