বিশেষ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জ শহরে সদর ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা কাজী শামছুল হুদা সোহেলের উপর বুধবার সকালে মুখোধারী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে চিকিৎসা দেন। এ সময় স্থানীয়রা ঘটনাস্থল থেকে শহরের তিন সন্দেহভাজন তরুণকে আটক করেছে। আটকৃত তিন তরুণ পালিয়ে যাওয়া মূল হামলাকারীর পরিচয় দিয়ে সেই তাদের ডেকে এনেছিল বলে জানিয়েছে। এ ঘটনায় আটকৃতদের থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। আহত ভূমি কর্মকর্তা কাজী শামসুল হুদা সোহেল মামলার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
আটককৃত তিন তরুণ হলো উত্তর আরপিন নগরের মহিবুর রহমানের ছেলে রবিন মিয়া (২০), একই গ্রামের শহিদ মিয়ার ছেলে মো. আকাশ (২২) ও একই এলাকার শহিদুল হকের ছেলে নিহারুল হক রবিন (২২)। এদের নামে অপহরণসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে আটককৃত তিন তরুণ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছে মূল হামলাকারী ছাতকের কালারুকা ইউনিয়নের কাজীহাটা গ্রামের ফারুক আহমদ মনোহর। মঙ্গলবার রাতে এসে সুনামগঞ্জ শহরের আল হেলাল হোটেলে অবস্থান করে সে। রাতে তিন তরুণকে নিয়ে হোটেল আলাপ করে এবং সকালে এক সঙ্গে নাস্তা করে আলাদাভাবে কাজী শামসুল হুদা সোহেলের উকিলপাড়াস্থ ভাড়াটে বাসভবনের পাশে গিয়ে ওৎ পেতে থাকে। সোহেল সকালে অফিসে যাবার সময় ভাড়া বাসা থেকে বের হলে পিছন দিক থেকে তার মাথা বরাবর লোহার রড দিয়ে আঘাত করে ফারুক। তিন তরুণ তখন পাশেই দাড়িয়ে হামলার ঘটনা সাধারণ মানুষের দৃষ্টি এড়ানোর চেষ্টা করছিল। এসময় স্থানীয়রা ‘ধর ধর’ বলে চিৎকার দিলে মুখোশধারী হামলাকারী ফারুক আহমদ মনোহর রাস্তায় রাখা সিএনজি করে দ্রুত পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা ধরার জন্য ধাওয়া করলে বাঁধা দেয় তিন তরুণ। এক পর্যায়ে স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তিন তরুণকে আটক করে। পরে উপজেলা ভূমি অফিসে নিয়ে তাদের আটকে রাখা হয়। এদিকে আটকৃত তিন তরুণ ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্টদের কাছে স্বীকার করেছে তারা হামলাকারীর সঙ্গে এসেছিল। তবে তারা হামলায় অংশ নেয়নি। হামলাকারী তাদের ভুল বুঝিয়ে এনেছিল। তারা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের কাছে হামলাকারীর নাম পরিচয় মোবাইল নম্বরও প্রদান করেছে। তাছাড়া আটককৃত তিনজনের মোবাইল ফোনেই হামলাকারীর মোবাইল নম্বর সেইভ করা রয়েছে। তারা টাকার বিনিময়েই হামলাকারীকে সহযোগিতা করেছে বলে জানিয়েছে উপজেলা ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্টরা। তারা হামলার ঘটনায় জলমহাল, ড্রেজার মেশিন ব্যবসায়ীসহ বড় একটি সিন্ডিকেট জড়িত বলে জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার সকাল পৌনে ১০ টায় শহরের ষোলঘর কাজির পয়েন্টের ভাড়া বাসা থেকে পাশের ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যাচ্ছিলেন কাজী শামসুল হুদা সোহেল। এসময় সূর্যের হাসি ক্লিনিকের সামনে থেকে একটি অটো রিক্সা থেকে নেমে মুখোশধারি ফারুক আহমদ মনোহর লোহার রড দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলে তিনি ছিটকে পড়েন। ফলে মাথায় গুরতর আঘাত লাগেনি। এসময় সে তার লোহার রড দিয়ে আঘাত করলে তিনি হাত ও পা দিয়ে নিজেকে রক্ষা করেন। তার আর্ত চিৎকার শুনে এড়িলে এলে মূল হামলকারী পালিয়ে যায়।
এদিকে এ ঘটনার পরই সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন নাহার রুমা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি হামলাস্থলে এসে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় নানা সূত্রে আটককৃত তিন তরুণ সম্পর্কে অনেক তথ্যও জানতে পারেন তিনি। বিকেল সাড়ে ৩টায় আটককৃত তিন তরুণকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
এ ঘটনায় সুনামগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আহত কাজী শামসুল হুদা সোহেল। তিনি জানান, জলমহাল, বালু মহাল ও বিভিন্ন স্থানে সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনার কারণেই হয়তো কোন ক্ষুব্দ গোষ্ঠী এই হামলা করাতে পারে। হামলার সহযোগীরা মূল হামলাকারীর পরিচয় আমার সহকর্মীদের কাছে স্বীকার করেছে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন নাহার রুমা বলেন, সন্দেহভাজন তিন তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ তাদের থানায় নিয়েছে। আটককৃতরা আমার অফিসের লোকদের কাছে হামলাকারী সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে।
সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে ওসিকে নির্দেশ দিয়েছি। হামলার কারণ উদঘাটনের চেষ্টা করছে পুলিশ। সরকারি কর্মচারীকে এভাবে মুখোশ পড়ে হামলার ঘটনাটি কঠোরভাবে দেখা হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানান, ঘটনাটি বেদনাদায়ক। আমি এসপি সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। আইনগতভাবে এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।